যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় পৌঁছানো অভিবাসীদের মুখের ভেতর সিম কার্ড লুকানো আছে কি না—তা তল্লাশির ক্ষমতা পাচ্ছে সীমান্ত কর্মকর্তারা। নতুন হোম অফিস নিয়মে এমনকি শিশুদেরও এই তল্লাশির আওতায় আনা হতে পারে, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে গভীর উদ্বেগে ফেলেছে।
নতুন আইন অনুযায়ী, সীমান্তে পৌঁছানো যে কোনো ব্যক্তির মোবাইল ফোন ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট কর্মকর্তারা জব্দ করতে পারবেন যদি মনে করা হয় যে এতে স্মাগলারদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। কর্মকর্তাদের অধিকার দেওয়া হচ্ছে যাত্রীরা কোট, জ্যাকেট বা দস্তানা খুলে দিয়েছেন কি না তা পরীক্ষা করতে এবং প্রয়োজনে মুখের ভেতর ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা সিম কার্ড লুকানো আছে কি না—তা সরাসরি তল্লাশি করতে।
হোম অফিসের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় মনে হলে শিশুদেরও এমন তল্লাশি করা হতে পারে। এই সম্ভাবনাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা বলে জানিয়েছে বিভিন্ন চ্যারিটি। তাদের দাবি—এই প্রক্রিয়া শরণার্থীদের মৌলিক মর্যাদা ও গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে এবং শিশুর জন্য তা আরও ভয়াবহ।
এক সিরীয় শরণার্থী বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের মুখে সিম কার্ড লুকানো—এমন ধারণাই বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তার ভাষায়, “আমাদের স্মাগলাররা বলেছিল ফোন থেকে সব তথ্য মুছে ফেলতে। অনেকেই সস্তা ফোন সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে, আর যাদের ভালো ফোন ছিল তারা ফ্রান্সে রেখে এসেছে। আমার মনে হয় এটা কেবল শাবানা মাহমুদের দেখানোর রাজনীতি।”
হিউমানস ফর রাইটস নেটওয়ার্কের ম্যাডি হ্যারিস বলেন, সাম্প্রতিক যাত্রায় যারা সহিংসতা ও ভয়াবহ পরিস্থিতি পেরিয়ে এসেছে, তাদের ক্রিমিনাল হিসেবে বিবেচনা করে এমন তল্লাশি করা অমানবিক। তার মন্তব্য, “হোম অফিসের উচিত মানুষের পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অপরাধী খোঁজা নয়।”
হোম অফিসের ব্যাখ্যা—এই ফোন ও শরীর তল্লাশির ক্ষমতা স্মাগলার নেটওয়ার্ক ভাঙার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্তে গ্রেপ্তার ছাড়াই ইমিগ্রেশন, পুলিশ এবং ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি কর্মকর্তারা ফোন তল্লাশি করতে পারবেন। পাশাপাশি নতুন ইন্টারিম সিরিয়াস ক্রাইম প্রিভেনশন অর্ডারের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মোবাইল, ল্যাপটপ ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতাও থাকবে।
বর্ডার সিকিউরিটি ও অ্যাসাইলাম মন্ত্রী অ্যালেক্স নরিস বলেন, “অপরাধী চক্রগুলো ফোনে নির্ভর করে অভিবাসীদের নিয়োগ ও পরিচালনা করে। নতুন ক্ষমতা আমাদের আরও তথ্য দিতে পারবে এবং বিপজ্জনক যাত্রার আগেই এসব গ্যাং দমন সম্ভব হবে।”
অন্যদিকে ফ্রিডম ফ্রম টর্চারের সাইল রেনল্ডস এই নীতিকে “ডিস্টোপিয়ান নিষ্ঠুরতা” বলে উল্লেখ করেছেন। তার অভিযোগ, শরণার্থীদের নিষ্ঠুরভাবে নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং তাদের সার্বজনীন গোপনীয়তার অধিকারকে প্রকাশ্যে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
নতুন নিয়মটি বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন বিল–এর অংশ, যা খুব শিগগিরই রয়্যাল অ্যাসেন্ট পেতে যাচ্ছে। তবে সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই এটি মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে

