সরকারের স্বাধীন অভিবাসন পরামর্শক প্যানেলের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ নাগরিক বা স্থায়ী অধিবাসীদের পার্টনার ভিসার আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় আয়সীমা কমানো যেতে পারে। তবে এতে নেট মাইগ্রেশনের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি জানায়, বর্তমান £২৯,০০০ আয়সীমার পরিবর্তে ভবিষ্যতে £২৩,০০০ থেকে £২৫,০০০ পর্যন্ত আয়সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে তারা টরি দলের পরিকল্পনা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে, যেখানে পরিবার ভিসার জন্য ন্যূনতম আয় £৩৮,৭০০ করার কথা ছিল, যা মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
কমিটি উল্লেখ করেছে, আয়সীমা যদি £২৪,০০০ থেকে £২৮,০০০ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়, তাহলে করদাতাদের ওপর বোঝা কমানো সম্ভব হবে, কিন্তু এতে পরিবারের সঙ্গে থাকা সময়ের মূল্যায়ন কিছুটা কমে আসবে। অন্যদিকে £২৩,০০০ থেকে £২৫,০০০ এর মধ্যে আয়সীমা রাখলে পরিবারগুলো নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে, যদিও ন্যূনতম মজুরির বেশি আয় বাধ্যতামূলক নয়।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, আয়সীমা কমানোর ফলে আগামীতে নেট মাইগ্রেশনে প্রায় ১ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি আসতে পারে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋশি সুনাকের সরকার পার্টনার ভিসার জন্য আয়সীমা দক্ষ কর্মীদের বেতনের সমান করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কমিটি বলেছে, পরিবার ভিসার উদ্দেশ্য এবং দক্ষ কর্মীর ভিসার উদ্দেশ্য ভিন্ন হওয়ায় আয়সীমা সেটির ওপর নির্ভর করা উচিত নয়।
কমিটি আরও সতর্ক করেছে, এই পদ্ধতি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার, বিশেষ করে ইউরোপীয় মানবাধিকার সংবিধানের আর্টিকেল ৮ এর বিরোধী হতে পারে, যা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অধিকার সংরক্ষণ করে।
যুক্তরাজ্যের বর্তমান £২৯,০০০ আয়সীমা অন্যান্য উচ্চ-আয়ের দেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে কমিটি উল্লেখ করেছে। কমিটির চেয়ার প্রফেসর ব্রায়ান বেল বলেছেন, আয়সীমা নির্ধারণ একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হলেও তারা সরকারের জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য ও প্রভাব তুলে ধরেছে।
বিশেষ করে পরিবারে শিশুদের ক্ষেত্রে আয়সীমা বাড়ানো প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়েছে, কারণ উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ থাকা সত্ত্বেও এটি শিশুদের পারিবারিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি কমিটি সুপারিশ করেছে, যুক্তরাজ্যের সব অঞ্চলে একই আয়সীমা প্রযোজ্য রাখা উচিত।
রিপোর্ট তৈরিতে তথ্যের অভাবের কথা উল্লেখ করে কমিটি হোম অফিসকে আবেদনকারীদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলেছে, যা ভবিষ্যতের নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে।
ক্যাম্পেইনকারীরা কমিটির কিছু সুপারিশ স্বাগত জানালেও আয়সীমা পুরোপুরি বাতিল না করার কারণে হতাশা প্রকাশ করেছেন। রিইউনাইট ফ্যামিলিজ ইউকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্যারোলিন কুম্বস বলেন, ন্যূনতম মজুরির কাছাকাছি সীমা থাকলেও অনেক পরিবারকে যুক্তরাজ্যে একত্রে বসবাসের স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত করছে।
তিনি আরও বলেন, “MIR-এর (ন্যূনতম আয়সীমা) বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক। এজন্য আমরা হোম সেক্রেটারির কাছে সাহস দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি, যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ নাগরিক ও স্থায়ী অধিবাসী এবং তাদের সন্তানদের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “হোম সেক্রেটারি স্বাধীন মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটিকে এই পর্যালোচনার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। আমরা এখন রিপোর্টের সুপারিশগুলো বিবেচনা করছি এবং শীঘ্রই প্রতিক্রিয়া জানাব। সরকার ইতোমধ্যে ইউরোপীয় মানবাধিকার সংবিধানের আর্টিকেল ৮-এর প্রয়োগ স্পষ্ট করার জন্য আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ জুন ২০২৫