যুক্তরাজ্যে বিদেশি নাগরিকদের কল্যাণ সুবিধা (benefits) বন্ধে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। দলের শ্যাডো চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইড জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্যই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সীমিত করা হবে, যার ফলে বিদেশিরা এসব সুবিধা থেকে বাদ পড়বেন— এমনকি তারা যদি বহু বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন এবং নিয়মিত করও পরিশোধ করে থাকেন।
টোরিদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পেনশন সুবিধা ও ইইউ নাগরিকদের ‘সেটেল্ড স্ট্যাটাস’-এর আওতায় থাকা ব্যক্তিরাই কেবল এই নীতির বাইরে থাকবেন। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য বছরে ৪৭ বিলিয়ন পাউন্ড সরকারি ব্যয় হ্রাস করা, যার মধ্যে ২৩ বিলিয়ন পাউন্ড আসবে কল্যাণ খাতের ব্যয় কমিয়ে।
বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মেল স্ট্রাইড বলেন, যেসব বিদেশি নাগরিক আর্থিক সমস্যায় পড়বেন, তাদের জন্য নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। তিনি বলেন, “যদি তারা বিশ্বের অন্য কোনো স্থান থেকে এসে থাকেন, তবে তাদের জন্য সেই জায়গায় ফিরে যাওয়ার বিকল্প থাকবে।” তার মতে, যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্বের একটি বিশেষ মূল্য থাকা উচিত এবং কল্যাণ ব্যবস্থা মূলত নাগরিকদের জন্যই নির্ধারিত।
কনজারভেটিভ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্যাডো ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস সেক্রেটারি হেলেন হোয়াটলি বলেন, “অনেক মানুষ অসুস্থতার সুবিধাকে জীবনযাপনের পদ্ধতি হিসেবে নিচ্ছেন।” তিনি দাবি করেন, “লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন বাড়িতে বসে আছেন, চিকিৎসকের কাছ থেকে অসুস্থতার নোট নিয়ে মাত্র একটি ফোন কল ও ফর্মের মাধ্যমে সুবিধা নিচ্ছেন।”
হোয়াটলি আরও অভিযোগ করেন, “অনেকে উদ্বেগ ও ADHD-এর মতো সমস্যার অজুহাতে সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন, সঙ্গে পাচ্ছেন বিনামূল্যের মোটরযোগ্য গাড়িও। টিকটকে এই বিষয়ে গাইডলাইন দেওয়া হচ্ছে, এমনকি কেউ কেউ সফল আবেদন নিশ্চিত করতে টাকাও দিচ্ছেন।”
রাতারাতি ঘোষিত নতুন টোরি পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, প্রায় ১,৩০,০০০ সরকারি চাকরি (civil service) কাটার মাধ্যমে বছরে ৮ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করা হবে। পাশাপাশি, বৈদেশিক সাহায্য ব্যয় জিডিপির ০.১%-এ নামিয়ে আরও ৭ বিলিয়ন পাউন্ড কমানো হবে। কিয়ের স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার সরকার ইতিমধ্যেই এটিকে ০.৩%-এ নামিয়ে এনেছে।
এছাড়া, “খরচবহুল ও অকার্যকর সবুজ ভর্তুকি” বাতিলের মাধ্যমে অতিরিক্ত সাশ্রয়ের পরিকল্পনাও রয়েছে। মেল স্ট্রাইড দাবি করেন, টোরিরাই একমাত্র দল যারা “বাস্তবসম্মত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা” গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, “আমাদের কল্যাণ বাজেট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিশেষ করে নিম্নস্তরের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে অনেকেই কাজের বাইরে রয়েছেন। আমরা চাই, তাদের পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনা হোক।”
স্ট্রাইড আরও জানান, ২০১৬ সালের পর থেকে সরকারি চাকরির সংখ্যা ৩৫% বেড়েছে, যা কমালে “উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় সম্ভব”। তার ভাষায়, “দেশ তার সামর্থ্যের চেয়ে বেশি খরচ করছে— এবং কনজারভেটিভ পার্টিই সেই দল, যারা আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসবে।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৬ অক্টোবর ২০২৫