যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি অপ্রত্যাশিতভাবে দুই বছরেরও বেশি সময়ে সর্বনিম্ন স্তরে নেমেছে। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় নভেম্বরে ভোক্তা মূল্য বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত মাসের তুলনায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কম। এটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন মূল্যস্ফীতির হার ছিল। জ্বালানি খরচ কমে যাওয়ায় ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমতে থাকায় মূল্য বৃদ্ধি ধীর হয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও অর্থনীতিবিদরা আশা করেছিলেন যে বছরের শেষ পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকবে।
প্রকৃত মূল্যস্ফীতি যাতে জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্যগুলো বাদ দেয়া হয় তা নভেম্বরে ৫ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের মাসে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। পরিষেবা মূল্যস্ফীতি (যা কোম্পানির মজুরি ব্যয়ের একটি পরিমাপক) সামান্য কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যস্ফীতি গত বছরের থেকে অনেক কমে এসেছে। গত বছর মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের ওপরে উঠেছিল। চার দশকের মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে দ্রুতগতির মূল্যস্ফীতি।
উচ্চ জ্বালানি শক্তি ও খাদ্য ব্যয়ের কারণে গৃহস্থালি বাজেট সংকুচিত হয়েছিল। সেজন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদহার বাড়িয়েছিল। সম্প্রতি সরকার বলেছে, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি একটি দিক পরিবর্তন করেছে। মূল্যস্ফীতি এখন গড় মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে কম। এটি জীবনযাত্রার দীর্ঘ ব্যয় সংকট কমাতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চ্যান্সেলর অব দি এক্সচেকার জেরেমি হান্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি অর্ধেকেরও বেশি কমে যাওয়ায় আমরা অর্থনীতি থেকে চাপ কমার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু অনেক পরিবার এখনো উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছে। তাই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সহায়তা করে এমন পদক্ষেপগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে যাব।’
খাদ্যদ্রব্যের দাম দুই বছর আগের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে। জানুয়ারিতে গৃহস্থালি জ্বালানি দামও বাড়বে। উচ্চ সুদহারের প্রভাব অর্থনীতিতে দেখা যাচ্ছে। বাড়ির মালিকরা বেশি উচ্চ মর্টগেজ রেট প্রদান করছে। এছাড়া কোম্পানিগুলো উচ্চ তহবিল ব্যয়ের মুখোমুখি।অর্থনৈতিক এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রিসেশনের আবির্ভাব ঘটতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মূল্যস্ফীতি ও দুর্বল প্রবৃদ্ধির ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি এখনো ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ। নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ধীর হওয়া সত্ত্বেও এটি এখনো অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় তুলনামূলক বেশি।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নীতিনির্ধারকরা গত সপ্তাহে জানিয়েছেন যে আগামী কিছুদিনের জন্য উচ্চ সুদহার তারা ধরে রাখতে পারেন। মূল্যস্ফীতি গতিতে ধীর হতে থাকলেও সুদহার কমানোর বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। বর্তমানে সুদহার নির্ধারণকারীরা মজুরি বৃদ্ধিকে শক্তিশালী রাখার দিকে মনোনিবেশ করছেন। গত বছরের তুলনায় অক্টোবরে গড় বেতন বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তা এখনও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রঃ দ্য নিউইয়র্ক টাইমস
এম.কে
২২ ডিসেম্বর ২০২৩