TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে সরকারি এসাইলাম সেন্টার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিশুরাঃ মানবপাচারের ছায়া

যুক্তরাজ্যের কেন্ট কাউন্টিতে সরকারি আশ্রয়ে থাকা একাকী শিশু আশ্রয়প্রার্থীদের নিখোঁজের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর তদন্তে উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যে আসার পর সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকা ৫০ জনেরও বেশি শিশু এখনো নিখোঁজ, যাদের অনেকেই মানবপাচারকারীদের হাতে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই শিশুরা মূলত ছোট নৌকা বা ট্রাকে লুকিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিল। কেন্ট কাউন্টি কাউন্সিল (KCC)-এর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের তত্ত্বাবধান থেকে মোট ৩৪৫ শিশু নিখোঁজ হয়েছে, যার মধ্যে ৫৬ জনের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি।

২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হোম অফিস কেন্টসহ কয়েকটি এলাকায় শিশুদের জন্য দুটি হোটেল পরিচালনা করেছিল। ওই দুই হোটেল থেকেই ১৩২ শিশু নিখোঁজ হয়, যার মধ্যে ২৪ জনকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি। এছাড়া ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত কাউন্সিলের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আরও ২১৩ শিশু নিখোঁজ হয়, যার মধ্যে ৩২ জনের কোনো সন্ধান মেলেনি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিখোঁজ শিশুদের মধ্যে আলবেনীয় শিশুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ—হোম অফিসের হোটেল থেকে ৬৮ জন এবং কাউন্সিলের আশ্রয় থেকে ৬৫ জন। এরপরের অবস্থানে রয়েছে আফগান ও ইরানীয় শিশুরা।

ইজলিংটন ল’ সেন্টারের মাইগ্রান্ট অ্যান্ড রিফিউজি চিলড্রেনস লিগ্যাল ইউনিটের এসমে মাডিল বলেন,

“এই পরিসংখ্যান ভয়াবহ। প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে এক আতঙ্কিত শিশু, যে যুক্তরাজ্যে আসার আগেই ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন,

“একজন শিশুর নিখোঁজ হওয়াও রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। এখানে শত শত শিশু হারিয়ে গেছে। এদের কেউই ‘নিজের ইচ্ছায়’ নিখোঁজ হয়নি; তারা পাচারচক্রের হাতে বন্দি, অনেকেই নির্যাতনের শিকার।”

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হাই কোর্ট রায় দেয় যে শিশুদের হোটেলে রাখার সরকারি নীতি অবৈধ। এরপর কেন্ট কাউন্সিল আশ্রয়ব্যবস্থা জোরদার করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ওই রায়ের পর থেকে আরও ৪৪ শিশু নিখোঁজ হয়েছে, যাদের মধ্যে ১০ জন এখনো নিখোঁজ এবং ৩৪ জনকে উদ্ধার করা গেছে।

এভরি চাইল্ড প্রোটেকটেড অ্যাগেইনস্ট ট্র্যাফিকিং ইউকে (ECPAT UK)-এর প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিসিয়া ডার বলেন,

“যখন কোনো শিশু নিখোঁজ হয়, তখন তার শোষণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। তারা তখন মানবপাচারের সবচেয়ে বড় লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে।”

কেন্ট কাউন্টি কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেন,

“যে কোনো শিশুর নিখোঁজ হওয়া আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। আমরা পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি তাদের খুঁজে বের করতে।”

তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের ন্যাশনাল রেফারেল মেকানিজম ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট চাইল্ড ট্র্যাফিকিং গার্ডিয়ান সার্ভিসে পাঠানো হয়, তবে “সব শিশুদের নিখোঁজ হওয়া সম্পূর্ণভাবে রোধ করা এখনো চ্যালেঞ্জ।”

একইসঙ্গে হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেন,

“একাকী আশ্রয়প্রার্থী শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ আমাদের অগ্রাধিকার। কোনো শিশু নিখোঁজ হলে আমরা সেটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিই এবং স্থানীয় পুলিশ ও কাউন্সিলের সঙ্গে সমন্বয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের আবহাওয়ার পূর্বাভাস: এ মাসের শেষে ভারী তুষারপাতের আশংকা

অনলাইন ডেস্ক

রুয়ান্ডা নীতি নিয়ে অপ্রকাশিত ফাইল প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্যে

যুক্তরাজ্যে ল্যান্ডলর্ডদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু