TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে হোম অফিসের নীতি স্থগিতঃ হাইকোর্টে শরণার্থী উচ্ছেদে সরকারের পরাজয়

যুক্তরাজ্য হোম অফিসের ২৮ দিনের ‘মুভ-অন’ নীতি স্থগিত করে এক শরণার্থীর উচ্ছেদ ঠেকিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি। সরকারের বিতর্কিত এই নীতির ফলে হাজার হাজার নতুন শরণার্থী রাস্তায় ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার ভোররাত ২টার ঠিক আগে বিচারপতি জনসন এক জরুরি রায়ে হোম অফিসের ওই নীতি অকার্যকর ঘোষণা করেন। এই নীতির আওতায় নতুন শরণার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ২৮ দিনের মধ্যে সরে যেতে বলা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এত অল্প সময়ের মধ্যে বিকল্প বাসস্থান, চাকরি বা সরকারি সহায়তা পাওয়া প্রায় অসম্ভব, ফলে শরণার্থীরা কার্যত গৃহহীন হয়ে পড়ছেন।

২০ বছর বয়সী এক এরিত্রিয়ান শরণার্থী এই মামলার কেন্দ্রবিন্দু। বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে তাকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে উচ্ছেদ করার কথা ছিল। কিন্তু তার আইনজীবীরা শেষ মুহূর্তে হাইকোর্টে আবেদন করেন, যুক্তি দেখিয়ে যে হোম অফিস ৫৬ দিন থেকে ২৮ দিনে নামিয়ে আনার প্রভাব যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেনি।

আদালতে দেওয়া বিবৃতিতে ওই শরণার্থী বলেন, “আমি খুব ভয় পাচ্ছি, কারণ আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। রাস্তায় ঠান্ডায় ঘুমাতে হবে। আমার কাছে কেবল একটি সোয়েটার আছে, কোট বা জ্যাকেট কিছুই নেই, কেনার সামর্থ্যও নেই।”

আদালত হোম অফিসকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই শরণার্থীকে উচ্ছেদ না করে তার জন্য ৫৬ দিন সময়সীমা বাড়াতে বা বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে। আদালতের রায়ে বলা হয়, “এখানে বিচারযোগ্য একটি গুরুতর বিষয় বিদ্যমান।”

শরণার্থীর পক্ষে আইনজীবী নাটালি হস বলেন, “এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন অন্যরাও একইভাবে আশ্রয়ের সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করতে পারবেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষেরও ন্যূনতম ৫৬ দিন সময় লাগে বিকল্প বাসস্থান দিতে। এর আগে উচ্ছেদ হলে মানুষ রাস্তায় পড়ে যায়, বিশেষত শীতকালে।”

হোম অফিস গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে ২৮ দিনের পরিবর্তে ৫৬ দিনের সময়সীমা চালু করেছিল। শরণার্থী সহায়তা সংস্থাগুলোর দাবি, এতে গৃহহীনতার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে। কিন্তু চলতি বছরের আগস্টে সরকার পুনরায় ২৮ দিনের নীতি ফিরিয়ে আনে, যার প্রতিবাদে ৬০টিরও বেশি এনজিও বিক্ষোভ জানায়।

সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা একটি ভাঙা আশ্রয় ও অভিবাসন ব্যবস্থা পেয়েছি। এটি সংস্কারে কাজ করছি—ব্যাকলগ কমিয়ে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি বাড়িয়ে এবং ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে হোটেল-নির্ভর আশ্রয়ের সংখ্যা ৬,০০০ কমিয়ে।” তিনি আরও জানান, “ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য ৫৬ দিনের সময়সীমা এখনও বহাল আছে।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সরকারের এই নীতি শুধু গৃহহীনতাই বাড়াচ্ছে না, বরং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ওপর অতিরিক্ত চাপও সৃষ্টি করছে। আদালতের সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপকে তারা “মানবিক ন্যায়বিচারের এক গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ” হিসেবে দেখছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের শক্তিশালী পতন

গ্র‍্যাজুয়েট ভিসা স্কিমের পক্ষে মত দিয়েছে মাইগ্রেশন অ্যাডভাইজরি কমিটি

যুক্তরাজ্য হাউস অব লর্ডসের সদস্য পদ সরিয়ে দেয়া হয়েছে সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রীকে