যুক্তরাজ্যে গৃহস্থালি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়োমিথেনকে কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে নতুন এক গবেষণা। খামারের বর্জ্য ও জৈব বর্জ্য থেকে উৎপাদিত এই গ্যাসকে দীর্ঘদিন ধরে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে প্রচার করা হলেও, গবেষণায় দেখা গেছে ২০৫০ সালেও এটি সর্বোচ্চ বর্তমান চাহিদার মাত্র ১৮% পূরণ করতে পারবে।
রিজেন নামের একটি বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান এমসিএস ফাউন্ডেশনের অনুরোধে এই গবেষণা চালায়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোবর, খামারের বর্জ্য ও নর্দমার বর্জ্য থেকে উৎপাদনযোগ্য বায়োমিথেনের পরিমাণ এত বেশি বাড়ানো সম্ভব নয় যাতে তা গৃহস্থালি পর্যায়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যায়। টেকসই উৎস সীমিত হওয়ায় এটি ব্যবহার করতে হবে এমন খাতে, যেখানে সর্বাধিক কার্বন হ্রাস সম্ভব।
এমসিএস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী গ্যারি ফেলগেট বলেন, “ডিকার্বনাইজেশনে বায়োমিথেনের ভূমিকা থাকবে, তবে ঘরে নয়। আমাদের জলবায়ু লক্ষ্য পূরণ করতে হলে গ্যাস গ্রিডের মাধ্যমে বাড়িঘর গরম করা যাবে না—তা জীবাশ্ম গ্যাস, হাইড্রোজেন কিংবা বায়োমিথেন যেটাই হোক না কেন। একমাত্র কার্যকর সমাধান হলো বিদ্যুৎ-নির্ভর হিটিং, যেমন হিট পাম্প।”
গ্যাস কোম্পানিগুলো বায়োমিথেনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে কারণ এর ব্যবহার অব্যাহত থাকলে বিদ্যমান পাইপলাইন, গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা ও বয়লার চালু রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু হিট পাম্পে স্থানান্তরিত হলে সেই অবকাঠামো অচল হয়ে পড়বে। একইভাবে, হাইড্রোজেন নিয়েও গ্যাস লবিস্টরা দাবি করলেও বিভিন্ন গবেষণায় এটি অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি সতর্ক করেছে, সরকার যদি এখন থেকেই গ্যাস গ্রিড অবসানের পরিকল্পনা না করে তবে এটি ভবিষ্যতে অচল সম্পদে পরিণত হবে। ফেলগেট বলেন, “ভোক্তা ও শিল্প খাতকে এখনই নিশ্চিত করতে হবে—বায়োমিথেন জীবাশ্ম গ্যাসের বিকল্প নয়, বরং হিট পাম্পই ঘরবাড়ি ডিকার্বনাইজেশনের একমাত্র টেকসই উপায়।”
রিজেনের জ্বালানি বিশ্লেষক ট্যামসিন লন্সডেল-স্মিথ বলেন, শিল্পক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে বায়োমিথেন কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি কেবল সঠিক উৎস থেকে, সঠিক পদ্ধতিতে এবং উপযুক্ত মাত্রায় উৎপাদিত হলে সবুজ জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সরকার এ বিষয়ে জানিয়েছে, বায়োমিথেন আমদানি নির্ভরতা কমাতে, জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে এবং নেট-জিরো লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হতে পারে। আগামী বছরের শুরুতে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক পরামর্শ প্রক্রিয়া চালু করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে তারা।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫