মাদক বিরোধী নীতি রচনার পর নিজেই সেই নীতির লঙ্ঘন করে চাকরি হারালেন মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা কমান্ডার জুলিয়ান বেনেট। মাদক পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা তদন্ত শেষে তাকে দ্বিতীয়বারের মতো চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে বরখাস্ত হন বেনেট। পুরো সময়টি তিনি পূর্ণ বেতন ভোগ করেন, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মেট পুলিশ নিজেই। বাহিনীটি বলছে, “এটা সরকারি অর্থের চরম অপচয়, যা দেখে লন্ডনবাসী আমাদের মতোই ক্ষুব্ধ হবেন।”
মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো শৃঙ্খলাভঙ্গ ট্রাইব্যুনাল বসে এবং তাকে গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে। সহকারী কমিশনার ম্যাট টুইস্ট বলেন, “এই ঘটনা সহজেই সমাধানযোগ্য ছিল। বেনেট কখনোই অস্বীকার করেননি যে তিনি আইনগত নির্দেশ না মেনে নমুনা দিতে অস্বীকার করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন এমন দীর্ঘসূত্রতা না ঘটে, সেজন্য পুলিশ দ্রুত শুনানি চালুর জন্য নতুন কৌশল নিচ্ছে।
শুনানিতে বেনেটের সাবেক ফ্ল্যাটমেট শীলা গোমেজ দাবি করেন, বেনেট প্রতিদিন সকালে নাশতার আগে গাঁজা সেবন করতেন। যদিও ট্রাইব্যুনাল এই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি, তবে বেনেট যে মাদক পরীক্ষায় অংশ নেননি, তা পেশাগত আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে গৃহীত হয়।
তিনি জানান, তিনি সিবিডি তেল গ্রহণ করছিলেন মুখের পক্ষাঘাত সারাতে, এবং এতে রিপোর্ট ভুলভাবে পজিটিভ হতে পারে—এই আশঙ্কায় তিনি নমুনা দেননি।
২০২৩ সালে প্রথম ট্রাইব্যুনালে সততা, নির্দেশ অমান্য এবং বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে তার আইনজীবীরা দাবি করেন, তাকে যে “সততার অভাব” দেখানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, সেই অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে আনা হয়নি।
এই যুক্তিতে পুলিশ আপিল ট্রাইব্যুনাল (PAT) তার বরখাস্ত আদেশ বাতিল করে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেয়। এরপর মেট পুলিশ আবার নতুন করে শুনানি শুরু করে, যেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এই রায়ের ফলে বেনেটকে যুক্তরাজ্যের পুলিশিং কলেজের অযোগ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে তিনি আর কোনো পুলিশ বাহিনী বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন না।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনার মাধ্যমে আবারও সামনে এলো পুলিশ বাহিনীর ভেতরের জবাবদিহিতা, নৈতিকতা ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার গুরুত্ব—যেখানে অপরাধী যেই হোক না কেন, বিচারের মুখোমুখি হতেই হয়।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
০৫ জুন ২০২৫