কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলাপমেন্ট অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে আফ্রিকার দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা করার চেয়ে যুক্তরাজ্য ব্রিটেনের শরণার্থীদের আবাসনের উপর তার বিদেশী সহায়তা বাজেটের তিনগুণ বেশি ব্যয় করেছে।
২০২২ সালের সরকারী অস্থায়ী পরিসংখ্যানগুলি দেখায় যে শরণার্থীদের জন্য ব্যয় ২০২০ সালে ৫৯৭ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২২ সালে ৩.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্বের অন্য কোনও প্রথম বিশ্বের দেশ তার মূলধারার সহায়তা বাজেট এই নিয়মে কর্তন করছে না বলে জানায় এইড ক্যাম্পেইন গ্রুপ বন্ড।
পরিসংখ্যান হতে পাওয়া উপাত্ত অনুযায়ী হোম অফিস আশ্রয় প্রার্থীদের আবাসন সংকট মোকাবেলায় মোট সহায়তা বাজেটের ২৯% ব্যয় করছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০% থেকেও বেশি। মূলত দুই লাখের বেশি আশ্রয় প্রার্থীদের আবাসনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সরকার অক্ষম ছিল। বেশিরভাগ শরণার্থী মূলত ইউক্রেন এবং আফগানিস্তানের। গত মাসে হোম অফিস এই শরণার্থীদের রাখার জন্য ৩৮৬ টিরও বেশি হোটেল ব্যবহার করছিল।
বন্ডের তথ্যমতে, আগামী দুই বছরে যুক্তরাজ্য সরকার বিশ্বের অন্যান্য দারিদ্র পীড়িত দেশে সাহায্যের অনুদান কর্তন করবে। যার অর্থ ইউকে এইড বাজেট থেকে মোট ৫ বিলিয়ন ডলার অপসারণ করবে কনজারভেটিভ সরকার তাদের নিজের দেশের শরণার্থীদের আবাসনের সমস্যা সমাধান করতে।
ও.ই.সি.ডি উন্নয়ন সহায়তা কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত বিধি দ্বারা যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাদের সহায়তা বাজেট শরণার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে ব্যয় করার জন্য। গ্লোবাল ডেভলাপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক ইয়ান মিচেল বলেন, সুইডেন ব্যাতিত অনেক ইউরোপীয় সরকার যুক্তরাজ্যের মতো সহায়তা বাজেটে আবাসন শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা বিশ্বের দারিদ্র জনগোষ্ঠীর উপর খারাপ প্রভাব পড়বে।
প্রতিবেদনে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তথ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন এইড মিনিস্টার অ্যান্ড্রু মিচেল অভিযোগ করেন ফরেন এইড বাজেট কর্তন ও ভিন্নখাতে ব্যবহার নিয়ে। মন্ত্রী কয়েকমাস ধরে অভিযোগ করে আসছেন যে তার বাজেট অন্য একটি বিভাগের শিকার হয়ে উঠেছে। তিনি এক বিভাগের ফান্ড অন্য বিভাগ ব্যবহার করাকে নিরুৎসাহিত করেন বলেও জানান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াচডগ এবং দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন কর্তৃক কনজারভেটিভ সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, হোম অফিসের বাজেটের উপর ক্যাপ নির্ধারণ করার জন্য। চ্যান্সেলর জেরেমি হান্টকে এই বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য সংসদ অধিবেশনেও চাপ দেওয়া হয়। লেবার পার্টির সাংসদরা বলেন, হোম অফিসের যে পরিমাণ অর্থ দাবি করতে পারে তার উপর ক্যাপ প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরি। ভিন্ন রাষ্ট্রকে সহযোগিতা দেওয়া এইড বাজেটটি এখন থেকে হোম অফিস কর্তৃক ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়।
গ্লোবাল ডেভলাপমেন্টের কেন্দ্র থেকে রণিল দ্রাতানায়াকে বলেন, “ শরণার্থীদের সাথে সম্পর্কিত ব্যয়ের হার যুক্তরাজ্যে বেড়ে গিয়েছে বলে যুক্তরাজ্য সরকার ফান্ড কর্তন করেছে। এটা কখনও যৌক্তিক নয়। এটি অতীতের দেয়া সহায়তা ফান্ডের সাথে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, “ এটা সত্য ইউক্রেন ও আফগানিস্তানের লোকদের যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়াতে যে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে তা সামাল দিতে সরকার হিমসিম খাচ্ছে। যার কারণে সহায়তা বাজেট ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
কনজারভেটিভ সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সময় নিয়ে বাজেট পর্যালোচনা করা হবে। সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হলেও তাদের সরকার ভবিষ্যতে বিদেশের সহায়তা ফান্ড মোট জাতীয় আয়ের ০.৭% ব্যয় করার লক্ষ্য পুনরুদ্ধার করবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য বিগত কয়েক যুগ হতে বৃহত্তম বৈশ্বিক সহায়তা দাতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। ২০২২ সালে জীবন বাঁচাতে এবং বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে দুর্বলদের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য কাজ করে গিয়েছে। তাছাড়া নারী ও ছোট মেয়েদের জন্য অর্থনৈতিক সমর্থন সহ এবং মানবিক সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রায় ১২.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাজ্য । বর্তমানে আশ্রয় প্রার্থীদের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারণে প্রায় সকল দেশই ব্যয় মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে।