যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়ায় শরণার্থীদের ফেরার প্রক্রিয়া সহজতর করতে চায় বলে যুক্তরাজ্যের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ৬,৫০০ আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন স্থগিত করা হয়েছে। কারণ সরকার আসাদ শাসনের পতনের পরবর্তী পরিস্থিতি মূল্যায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ইগল বলেছেন, বহু শরণার্থী বাশার আল-আসাদের শাসনের অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে এসেছিলেন এবং যদি যুক্তরাজ্য থেকে এখন তারা সিরিয়ায় ফিরে যেতে চান, তবে “আমরা অবশ্যই তা সহজ করতে চাই”।
যাদের আশ্রয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনুমতিপত্র অব্যাহত থাকবে কিনা জানতে চাইলে ইগল টাইমস রেডিওকে বলেন, “আমরা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কী উদ্ভূত হয় তা দেখার জন্য প্রায় ৬,৫০০ আবেদন বিবেচনা স্থগিত রেখেছি।
“যদি কেউ বাড়ি ফিরতে চান, আমরা অবশ্যই তা সহজ করতে চাই, তবে আমি মনে করি, সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে কী উদ্ভূত হয়, তা বলার জন্য এখনো সময় হয় নাই। ”
গত রবিবার ইসলামি গ্রুপ হায়াত তাহরির আল-শাম (HTS) এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি দামাস্কাস দখল করে এবং দেশটির দীর্ঘ এক দশকের বেশি গৃহযুদ্ধ শেষে রাজধানীতে উচ্ছ্বাসে ভরা অভ্যর্থনা পায়।
সোমবার, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভেট কুপার চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে আশ্রয় আবেদনের মূল্যায়ন স্থগিত করার ঘোষণা দেন এবং বলেন, “আসাদ শাসনের পতনের পর পরিস্থিতি অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।”
অন্য ইউরোপীয় দেশগুলিও সিরিয়ানদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করার কথা জানিয়েছে। অস্ট্রিয়া ইতোমধ্যেই সিরিয়ায় “পুনর্বাসন ও বহিষ্কার” কর্মসূচি প্রস্তুত করছে।
জার্মানিতে সিরিয়ার ৪৭,০০০-এরও বেশি আশ্রয় আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আসাদের “নৃশংস শাসনের” অবসান সিরিয়ানদের “অবশেষে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে গিয়ে দেশ পুনর্গঠনের আশা দিয়েছে।”
পৃথকভাবে, জার্মানি আইন কঠোর করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যাতে যুক্তরাজ্যে ছোট নৌকায় পাড়ি জমানোর সুবিধার্থে মানবপাচারকারীদের সহজেই দোষী সাব্যস্ত করা যায়। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অভিবাসন অপরাধ মোকাবিলায় একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সুইডিশ অভিবাসন সংস্থা সিরিয়ানদের আশ্রয় আবেদন ও বহিষ্কারের সমস্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। ফরাসি সরকারও বর্তমান আশ্রয় মামলাগুলি স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।
ইমিগ্রেশন মন্ত্রী টাইমস রেডিওতে বলেন, “আশ্রয় প্রার্থনার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল আসাদ শাসন থেকে পালানো। পরিস্থিতি এখন এতটাই অস্থিতিশীল যে, আমরা সিদ্ধান্ত পুনরায় শুরু করার আগে কিছু সময় অপেক্ষা করব। পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এমন একটি অঞ্চলে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।”
ইগল বলেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি “খুব ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে। তাছাড়া আমাদের মিত্রদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছে এই পরিস্থিতি কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা দেখার জন্য।”
“জিহাদিদের যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন স্পষ্টতই বড় উদ্বেগের বিষয়, এজন্য আমরা আগামী কয়েক দিন এবং সপ্তাহে এই পরিস্থিতির উপর খুব ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখব।”
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১১ ডিসেম্বর ২০২৪