1.4 C
London
November 22, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

যে কারণে দ্বিতীয় চাকুরীতে ঝুঁকছেন ব্রিটিশ এমপিরা

শুধু রাজনীতিতে আর পোষাচ্ছে না। সে কারণেই রাজনীতির পাশাপাশি ‘দ্বিতীয় চাকরি’তে ঝুঁকছেন ব্রিটেনের এমপি-মন্ত্রীরা। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দ্বিতীয় চাকরি বা অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে নিজেদের নির্বাচিত আসনে যাওয়াও কমিয়ে দিয়েছেন এমপিরা।

‘ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাকাউন্টস প্রজেক্ট’ নামে পরিচালিত ব্রিটেনের স্কাই নিউজ ও টর্টোইজ মিডিয়ার যৌথ অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

স্থানীয় সময় শুক্রবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রচার হতেই শোরগোল পড়ে গেছে পুরো ব্রিটেনে। দ্বিতীয় চাকরিবিলাসী হেভিওয়েট তালিকার বিরাট অংশই দখল করে আছেন দেশটির ক্ষমতাসীন টোরি দলের এমপি-মন্ত্রীরা। আর এতেই খ্যাপে উঠেছেন বিরোধী লেবার পার্টির হর্তাকর্তারা।

ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবনটি লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার শহরে অবস্থিত বলেই ‘ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাকাউন্টস প্রজেক্ট’ নাম দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটির।
চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বাড়তি আয়ে ঝুঁকে এমপি-মন্ত্রীদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষমতাসীন-বিরোধী দলের লম্বা তালিকায় দেখা গেছে, টোরি এমপিদের একটি প্রভাবশালী দল দ্বিতীয় চাকরিতে লাখ লাখ পাউন্ড উপার্জন করছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ হারে উপার্জন করা এমন ১০ শীর্ষস্থানীয় এমপির মধ্যে ৯ জনই কনজারভেটিভ পার্টির। ১ জন ছিলেন এএনপি’র রাজনীতিবিদ।

প্রতিশ্রুতির বহর নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনি এলাকার জনগণকে সেবা দেওয়ার পরিবর্তে অতিরিক্ত উপার্জনের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাকাউন্টস প্রজেক্টের গবেষণায় দেখা গেছে, সংসদের বাইরে দ্বিতীয় চাকরির জন্য ব্রিটিশ এমপিরা গড়ে ২৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড উপার্জন করেন। যা জাতীয় গড় আয় থেকে ১৭ গুণ বেশি। ব্রিটেনে প্রচলিত শ্রমিক নীতির তুলনায় ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরির চেয়ে ২২ গুণ বেশি।

প্রতিবেদনটি প্রকাশ হতেই টনক নড়েছে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এমপিদের দ্বিতীয় চাকরির পরিবর্তে তাদের নির্বাচনি এলাকার সেবায় মনোনিবেশ করা উচিত।’

তবে এ বিষয়ে এমপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
২০১৯ সালের শেষের দিকে সংসদ শুরু হওয়ার পর থেকে এমপিরা জনসেবার বাইরে প্রায় ৮৯ হাজার ঘণ্টা ‘দ্বিতীয় চাকরি’ করেছেন। আর এ কাজে সবার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর থেকে ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৬ পাউন্ড অর্জন করেন। দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আয় করেন।

ক্যামব্র্রিজ স্পিকার সিরিজ থেকে তার সবচেয়ে বড় বেতনের চেক আসে। যেখানে তাকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ছয়টি আলোচনার জন্য ৪ লাখ ৮ হাজার ২০০ পাউন্ড দেওয়া হয়।

এমপিএসএফে বক্তৃতার জন্য ৩৮ হাজার পাউন্ড অর্জন করতেও সক্ষম হন তিনি। তার উপার্জিত অর্থ অফিস অব থেরেসা মে লিমিটেডে চলে যায়।অনুসন্ধানী টিমে পক্ষ থেকে উপার্জন সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য বারবার তাকে অনুরোধ করলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বর্তমান এমপিদের মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ চেক পান টোরি দলের আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। বক্তব্য দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় পান ১৫ হাজার ৭৭০ পাউন্ড। কিন্তু তার সবচেয়ে লাভজনক কাজ তাইওয়ানের একটি বক্তব্য।

তাইওয়ানের ওই বক্তব্যের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ২০ হাজার পাউন্ড অর্থ প্রদান করা হয় ট্রাসকে। যা যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের গড় ঘণ্টার বক্তৃতার ১৫০০ গুণ বেশি। তবে টাকার পাহাড়ে ট্রাসের থেকে অনেক উঁচুতে রয়েছেন টোরি দলের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যিনি গত মাসে এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বক্তৃতা করেই প্রতি ঘণ্টায় ২১ হাজার ৮২২ পাউন্ড ঘরে তোলেন বরিস।

স্কাই নিউজের প্রতিবেদনের পর লেবার পার্টির চেয়ার অ্যানেলিজ ডডস তাদের কনজারভেটিভ প্রতিপক্ষ গ্রেড হ্যান্ডসকে চিঠির মাধ্যমে দ্রুত তদন্তের আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে এসএনপি’র এক এমপি বলেন, ‘এমপি হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পূর্ণকালীন কাজ। অবশ্যই আপনি যখন পরবর্তী নির্বাচনে দাঁড়াবেন, আপনি আপনার ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।’

এম.কে
২১ জুলাই ২০২৩

আরো পড়ুন

বাধ্যতামূলক যৌনশিক্ষার বিপক্ষে ইতালি

৩ মাস বেতন নেবেন না মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা

যুক্তরাজ্যে রাস্তায় হিজাব পরিহিত নারীর ওপর হামলা