গুপি গাইন ও বাঘা বাইন সিনেমাটি নির্মাণ করেন অস্কার জয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তার দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা গল্প অবলম্বনে ছোটদের জন্য নির্মিত এই সিনেমাটি আপনাকে একাধারে করবে আশ্চর্য, হবেন মুগ্ধ, জাগবে বিস্ময় এবং পাবেন নির্মল আনন্দ।
আজকে আপনাদের শোনাবো গুপি গাইন বাঘা বাইন সিনেমার অদ্ভুত কাহিনী:
আমলকি গ্রামের কানু কানাইয়ের ছেলে গোপিনাথের গানের বড় শখ।
তানপুরা নিয়ে হাটে মাঠে দিনরাত ঘুরে বেড়ায় সে। স্বপ্ন তার বড় গায়ক হবে। কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণ অসম্ভব। কারণ দুর্ভাগা গোপির গলায় কোনো সুরই নেই। তার বেসুরো গলার গানের জন্য গ্রামের মাঝে সে একটা হাসির পাত্র।
একদিন বটতলার বাবুদের সাথে দেখা হয়ে যায় গোপির। গোপির সঙ্গে মজা করার লোভ সামলাতে না পেরে তাকে জব্বর একটা প্রস্তাব দিয়ে বসেন বাবুরা। গোপিকে বলা হয়, তাদের আমলকি গ্রামের রাজা সংগীতের বড় সমঝদার। গোপী যদি সকাল হবার আগেই রাজার শোবার ঘরের কাছে ভাঙ্গা মন্দিরে বসে রাজবাড়ীর দিকে মুখ করে গলা ছেড়ে গান গাওয়া শুরু করে তবে রাজা খুশি হয়ে তাকে অনেক পুরস্কার দেবেন।
তাদের কথা শুনে গোপী খুশিতে ডগোমগো হয়ে বাসায় এসে তার বাবাকে বাবুদের প্রস্তাবের কথাটি বলে। আর এতে ক্ষেপে যান তার বাবা। গোপিকে ভৎসনা করে বলেন, বটতলার বাবুদের তামাশা বোঝার মত ক্ষমতা গোপীর নেই। সে যেন গান-বাজনা বাদ দিয়ে ঘরের কাজে মন দেয়।
কিন্তু গানপাগল গোপীনাথ রাজার পুরস্কারের আশায় পরদিন সকাল না হতেই তানপুরা হাতে বেরিয়ে পড়ে। গিয়ে রাজার শোবার ঘরের দিকে মুখ করে শুরু করে তার ভাঙ্গা গলায় রেওয়াজ। রাজামশাই তার “ভয়ঙ্কর” গলার গান শুনে ঘুম ভেঙে উঠে পেয়াদাকে হুকুম দেয় তাকে ধরে নিয়ে আসতে। পেয়াদা এসে গোপিকে বলে রাজা তার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন। গোপি ভাবে রাজা তাকে পুরস্কার দেবেন। তাই খুশিতে ডগোমগো হয়ে তানপুরা হাতে পেয়াদার পিছু নেয় সে।
রাজদরবারে গেলে রাজার রোষানলে পড়ে যায় গোপি। বেচারার তানপুরা ভেঙে দিয়ে রাজা আদেশ করেন গাধার পিঠে করে যেন গ্রাম থেকে তাকে দূর করে দেয়া হয়। মনের দুঃখে গোপি চোখের পানি মুছতে মুছতে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। আর আমাদের সিনেমার গল্প শুরু।
গ্রাম ছেড়ে বহুদূরে চলে আসে গোপী। এক বাঁশবাগানে তার দেখা হয় হরতকি গ্রামের বাঘা বাইন সাথে। যাকে কিনা গোপীর মতোই গ্রামছাড়া করেছেন ওই গ্রামের রাজামশাই।
বাঘা একজন ঢোলক এবং ঢোলটি ছাড়া তার আর কিছুই নেই
এদিকে জঙ্গলে তখন রাত হয়ে আসে। আর জঙ্গলে রাত মানেই যেন বাঘের ভয়। বাঘের হাত থেকে বাঁচার আশায় গান-বাজনা শুরু করে দেয় গোপী-বাঘা। তাদের শব্দদূষণে বাঘ পালিয়ে গেলেও বিপদ আসে অন্যদিক থেকে। জঙ্গলে থাকা ভূত পেত্নী গোপীবাঘার সামনে শুরু করে নৃত্য সঙ্গীত। শুরু হয় এর এক ভয়াবহ প্রদর্শনী।
গান-বাজনা, নৃত্য-গীতি শেষ করে ভূত রাজা গোপী-বাঘাকে তিনটি বর উপহার দেন।
প্রথম বরটি ছিলো একটা থালা, যাকে বললেই অফুরন্ত খাবার এনে হাজির করে। ২য়টি হলো এক জোড়া জুতা। এই জুতা পড়ে কোনো জায়গার নাম বললেই সেই জায়গায় চলে যাওয়া যাবে। ৩য় বরটির কল্যাণে গোপির গানের গলা আর বাঘার ঢোলের বাড়ি এত সুন্দর হয়ে যায় যে, তারা একসাথে গান শুরু করলেই চারপাশের সবকিছু থেমে যায়, এই গান কানে গেলে কেউ আর নড়তেচড়তে পারে না, কথাও মুখ থেকে বেরোয় না। বরগুলো দিয়ে ভূতের রাজা চলে যায়
পরদিনও ঘুম থেকে উঠে গোপী-বাঘার জীবন আক্ষরিক অর্থেই বদলে যায়। ভূত রাজার দেয়া বর গুলো তারা পরীক্ষা করে দেখে। তারা ঠিক করে যে, গ্রামে আর ফিরে কি হবে, ‘তারচেয়ে পথে পথে থেকে গান-বাজনা হবে, নাম ডাক হবে, রাজকন্যার সাথে বিয়ে হবে।‘
পথে থাকা অবস্থাতেই গোপী-বাঘার সাথে দেখা হয় একদল গায়কের। তারা জানায়, শুণ্ডি দেশের রাজার দরবারে গানের বাজি হবে। দূরদূরান্ত থেকে গায়ক-বাদক জড়ো হচ্ছেন তার রাজ সভায়। যার গান রাজার ভালো লাগবে তাকেই রাজপ্রাসাদে রেখে দেবেন সভাগায়ক বানিয়ে।
একথা শুনে জাদুর জুতো সাহায্যের গুপী-বাঘা পৌঁছে যায় শুণ্ডি রাজ্যে।
কিন্তু এই শুণ্ডি রাজ্যে এসে আশ্চর্য হয়ে যায় তারা। এই রাজ্যে সবকিছু থাকলেও লোকদের মুখে কোনো কথা নেই। কোনো এক আজব রোগে সব লোক যেন বোবা হয়ে গিয়েছে। ইশারা ইঙ্গিতে মানুষের দেখানো পথে রাজপ্রাসাদে গিয়ে হাজির হয় গোপী-বাঘা।
বাকি অংশ পরের পর্বে প্রকাশ হবে…
২৮ অক্টোবর ২০২১
এনএইচ