TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

স্টারমারের আহ্বানঃ ডানপন্থার উত্থান ঠেকাতে ইসিএইচআর সীমিত করার পথে ইউরোপ

ইউরোপজুড়ে জনতাবাদী ডানপন্থার উত্থান ঠেকাতে যৌথ মানবাধিকার আইন ইসিএইচআরের (ECHR) কঠোর পুনর্ব্যাখ্যার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি মনে করেন, সীমান্ত সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর হাতে আরও শক্তিশালী আইনগত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বুধবার স্ট্রাসবুর্গে কাউন্সিল অব ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনের আগেই স্টারমারের এই অবস্থান নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

 

স্টারমার বলেন, আশ্রয়প্রার্থীরা কনভেনশনের ধারা ব্যবহার করে বহিষ্কার এড়াতে পারলে তা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করে। তিনি ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসনের সঙ্গে যৌথ প্রবন্ধে দাবি করেন— কনভেনশনের ব্যাখ্যা আধুনিকায়ন সময়ের দাবি, অন্যথায় ইউরোপে বিভেদ ছড়ানোর শক্তি আরও বাড়বে। তাদের মতে, “প্রগতিশীল রাজনীতি সীমান্ত সংকট সমাধানে ব্যর্থ হলে ঘৃণার রাজনীতি আরও জোরালো হবে।”

তবে স্টারমারের এই অবস্থান মানবাধিকার সংগঠন, লেবার পার্টির অভ্যন্তরের অংশ ও কিছু এমপির কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। মাইকেল পেলিন, স্টিফেন ফ্রাই, জোয়ানা লামলিসহ ২১ জন খ্যাতিমান ব্যক্তি প্রকাশ্য বিবৃতিতে মানবাধিকার আইন দুর্বল না করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, যুক্তরাজ্য যদি এই নীতির পথ খুলে দেয়, তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে।

যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে সম্মেলনে যাচ্ছেন বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ও অ্যাটর্নি জেনারেল রিচার্ড হারমার। সরকার বিবেচনা করছে— ইসিএইচআরের ধারা ৮ (ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অধিকার) এবং ধারা ৩ (নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের নিষেধাজ্ঞা) নতুনভাবে ব্যাখ্যার সুযোগ রাখা যায় কি না। বিশেষ করে ধারা ৩ সীমিত হলে কারাগারের অবস্থা বা বিদেশে স্বাস্থ্যসেবার মানের ঝুঁকি দেখিয়ে বহিষ্কার ঠেকানোর সুযোগ কমে যাবে।

ল্যামি যুক্তি তুলে ধরবেন— কনভেনশন থেকে বেরিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়, বরং তা জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দুর্বল করবে। তবে তিনি একই সঙ্গে বলবেন, “অধিকার ও জনস্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ‘পারিবারিক জীবনের’ সংজ্ঞা এতটাই বিস্তৃত হতে পারে না যে অবৈধভাবে থাকা ব্যক্তির অপসারণ বাধাগ্রস্ত হয়।”

অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ডেনমার্কের অনুকরণে কঠোর নীতি নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে— অবৈধভাবে আগতদের স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে ২০ বছর অপেক্ষা, শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তিদের দেশে নিরাপত্তা ফিরে এলে ফেরত পাঠানো, এবং আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন ও ভাতা দেওয়ার আইনগত বাধ্যবাধকতা বাতিল। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— সীমিত ‘নিরাপদ ও বৈধ পথ’ চালু করা হবে, যাতে ঝুঁকিপূর্ণ ছোট নৌকা যাত্রা কমে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন— বিশেষ করে ধারা ৩ দুর্বল করা হলে তা ইসিএইচআরের মূল ভিত্তিকেই আঘাত করবে। ইউসিএল-এর আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ভেরোনিকা ফিকফাক বলেন, “নির্যাতনবিরোধী অধিকার পরম— এতে কোনো ছাড় নেই। এখানে রাষ্ট্রের কোনো নিজস্ব বিবেচনা গ্রহণযোগ্য নয়।”

স্ট্রাসবুর্গের সম্মেলনে ৪৫টি দেশ সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করবে, যেখানে ইতালি ও ডেনমার্কসহ নয়টি দেশ ইতোমধ্যে ইসিএইচআরের পরিসর সীমিত করার দাবি জানিয়েছে। এই বৈঠকে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক ঘোষণা গ্রহণ করা হলে ভবিষ্যতে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের ব্যাখ্যায়ও তা প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ!

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্যের লিডসে এক রোগী ওষুধের অভাবে মারা গিয়েছেন

রিফর্ম–কনজারভেটিভ জোটের গুঞ্জনে তোলপাড় ব্রিটিশ রাজনীতি