লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে কর্মরত ভারতীয় ও এশীয় বংশোদ্ভূতদের ইংরেজি ভাষা না জানার অভিযোগ তুলে এক ব্রিটিশ নারীর করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও এটি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—ভারতের প্রভাব কি সত্যিই যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে?
লুসি হোয়াইট নামে এক নারী, যিনি নিজেকে একজন ‘পাবলিক পলিসি স্পেশালিস্ট’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন:
“এইমাত্র লন্ডনের হিথ্রোতে নেমেছি। অধিকাংশ কর্মী ভারতীয়/এশীয় এবং তারা একটাও ইংরেজি বলেন না।”
তার এই মন্তব্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। অনেকেই এটিকে বর্ণবাদী এবং এক ধরনের জাতিগত আক্রমণ হিসেবে দেখলেও, আরেক অংশ লুসির বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের ভেতরে গভীরভাবে গেঁথে বসা ভারতীয় প্রভাবের প্রতিফলন খুঁজে পাচ্ছে।
হিথ্রো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি না দিলেও, অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, এই অভিযোগের বাস্তবতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্রিটেনে ভারতীয় এবং দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীদের উপস্থিতি বহু দশকের পুরনো। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, পরিবহন, এবং বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় এদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে—এদের আধিপত্য কেবল কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ, না কি তা এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত?
ব্রিটেনের একাধিক পর্যবেক্ষক বলছেন, শুধু হিথ্রো নয়, দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ (NHS), আইটি, ও শিক্ষা খাতেও ভারতীয় ও এশীয় অভিবাসীদের আধিপত্য ক্রমেই স্পষ্ট। এমনকি ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও ভারতীয় বংশোদ্ভূত হওয়ায় বহু সমালোচক এটিকে ভারতের ‘নরম উপনিবেশবাদ’ বলেও অভিহিত করছেন।
এদিকে, লুসি হোয়াইটের পোস্টে অনেকে লিখেছেন, “এটা ইংল্যান্ড, এখানে ইংরেজি ভাষাই তো চলার কথা।” অন্যদিকে, কেউ কেউ বলেছেন, “বৈচিত্র্যময় সমাজ গঠনে যুক্তরাজ্য নিজেই পথ দেখিয়েছে। এখন সেই বৈচিত্র্য নিয়েই অসন্তোষ কেন?”
বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা হিথ্রো বিমানবন্দর ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত আন্তর্জাতিক গেটওয়ে। বছরে কয়েক কোটি যাত্রী এখানে যাতায়াত করেন। বিমানবন্দরের কর্মীরা প্রায় ৮০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন, যার মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্য।
এই ঘটনার পর ব্রিটিশ মিডিয়া এবং রাজনৈতিক পরিসরে ‘ইংল্যান্ডের বিভাগসমূহ কি এখন ভারত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?’—এই প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বক্তব্যের মাধ্যমে ব্রিটেনে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতি উসকে দেওয়ার ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে।
তবে স্পষ্টতই বলা যায়, লুসি হোয়াইটের পোস্ট শুধু একটি ব্যক্তিগত মন্তব্য নয়, এটি এখন ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ নীতি, সাংস্কৃতিক জটিলতা এবং উপনিবেশ-উত্তর বাস্তবতার প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
১২ জুলাই ২০২৫