নেটফ্লিক্স ৭২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল চুক্তিতে ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারির চলচ্চিত্র ও স্ট্রিমিং ব্যবসা অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় হলিউড পুনর্গঠনের সূচনা বলে বিবেচিত হচ্ছে। বহু মাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর কমকাস্ট ও প্যারামাউন্ট–স্কাইড্যান্সকে পেছনে ফেলে নেটফ্লিক্স সফল দরদাতা হয়ে ওঠে। ওয়ার্নার ব্রোসের মালিকানায় রয়েছে হ্যারি পটার, গেম অব থ্রোন্স, ডিসি ইউনিভার্সসহ বহু ব্লকবাস্টার ফ্র্যাঞ্চাইজি এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম এইচবিও ম্যাক্স।
চুক্তিটি কার্যকর হতে এখনো বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন প্রয়োজন। তবে সমালোচনার মধ্যেও নেটফ্লিক্সের সহ–প্রধান নির্বাহী টেড সারানডস জানিয়েছেন, তারা অনুমোদন পাওয়ার বিষয়ে “উচ্চমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী” এবং পুরো প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার মতে, দুই প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি একীভূত হলে দর্শকরা আরও বৈচিত্র্যময় ও মানসম্পন্ন কনটেন্টের অভিজ্ঞতা পাবেন, যা আগামী শতাব্দীর গল্প বলার ধারা নতুনভাবে নির্ধারণ করবে।
ওয়ার্নার ব্রোসের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ডেভিড জাসলাভ বলেন, দুই কোম্পানির এই সংযুক্তি “বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই গল্পকার প্রতিষ্ঠানকে এক মঞ্চে” নিয়ে আসবে। তিনি দাবি করেন, এই জোট বৈশ্বিক দর্শকদের বহু প্রজন্ম ধরে সেরা গল্প উপহার দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করবে। চুক্তিটি নগদ ও শেয়ার মিলিয়ে ওয়ার্নার ব্রোসের প্রতি শেয়ারের মূল্য ২৭.৭৫ ডলার নির্ধারণ করেছে, যেখানে মোট এন্টারপ্রাইজ ভ্যালু দাঁড়াচ্ছে ৮২.৭ বিলিয়ন ডলার।
তবে সমালোচনা থেমে নেই। রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা চুক্তিটিকে “অবশ্যই বন্ধ করা উচিত” বলে মন্তব্য করেছে। তাদের মতে, এই একীভূতকরণ শিল্পে চাকরি কমাবে, মজুরি হ্রাস করবে, কর্মপরিবেশ খারাপ করবে এবং ভোক্তাদের জন্য মূল্য বৃদ্ধি করবে। সিনেমা ইউনাইটেডের প্রধান নির্বাহী মাইকেল ও’লিয়ারি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, এই চুক্তি “বিশ্বব্যাপী সিনেমা ব্যবসার জন্য অভূতপূর্ব হুমকি” তৈরি করবে এবং প্রভাব পড়বে বড় চেইন থেকে শুরু করে ছোট শহরের এক–স্ক্রিন হল পর্যন্ত।
চুক্তি সম্পন্নের আগে ওয়ার্নার ব্রোস তাদের ব্যবসাকে দুটি পৃথক কোম্পানিতে ভাগ করবে—স্ট্রিমিং ও স্টুডিও বিভাগ একদিকে, আর গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বিভাগ অন্যদিকে। গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বিভাগ ‘ডিসকভারি গ্লোবাল’ নামে পুনর্গঠিত হবে, যেখানে থাকবে সিএনএন, টিএনটি স্পোর্টস, ডিসকভারি চ্যানেলসহ গুরুত্বপূর্ণ কেবল নেটওয়ার্ক। টিএনটি স্পোর্টস ইন্টারন্যাশনালসহ স্ট্রিমিং ব্যবসা নেটফ্লিক্সের অধীনে যাবে।
বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তি অনুমোদন পেলে হলিউডে বড় ধরনের উৎপাদন হ্রাস, কনটেন্ট পুনর্গঠন ও বাজারমূল্য বৃদ্ধির মতো প্রভাব দেখা দিতে পারে। এন্ডার্স অ্যানালিসিসের টম হ্যারিংটন মনে করেন, একীভূতকরণ সফল হলে স্ট্রিমিং মূল্য বৃদ্ধি অনিবার্য, এমনকি এইচবিও ম্যাক্স অপ্রধান হয়ে পড়লেও নেটফ্লিক্সের গ্রাহকভিত্তি বাড়তে থাকবে। প্রযুক্তি বিশ্লেষক পাওলো পেসকাতোরে বলেন, এটি নেটফ্লিক্সের “বিশ্বব্যাপী স্ট্রিমিং সাম্রাজ্য গঠনের স্পষ্ট ঘোষণাপত্র।”
নেটফ্লিক্স অবশ্য হলিউডকে আশ্বস্ত করেছে যে ওয়ার্নার ব্রোসের চলচ্চিত্রগুলো আগের মতোই সিনেমা হলে মুক্তি পাবে। AJ Bell–এর ড্যানি হিউসন বলেন, দ্রুত নিয়ন্ত্রক অনুমোদন পেলে উল্লেখযোগ্য খরচ সাশ্রয় হবে, তবে সেই সাশ্রয় ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাবে কিনা—তা আগামী কয়েক মাসে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

