করোনা ভাইরাসের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবেলায় সমানভাবে চরম অপারদর্শিতার পরিচয় দিয়ে চলেছি আমরা সবাই। বিষয়টি আমার জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, বাড়িতে থেকে কাজ করার বেলায় আমি আপনাদের থেকে পারদর্শী। কারণ গত ২০ বছর ধরে আমাকে এভাবেই কাজ করতে হচ্ছে।
ডেইলি মেইলের খবরে হয়তো দেখেছেন, যুক্তরাজ্যের ২৫ শতাংশ লোক প্রতিদিন গোসল করা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং ১৪ শতাংশ লোক গোসলের সময় প্রসাধনীর ব্যবহার করছেন না। এটা নিয়ে যে বাড়াবাড়ি শুরু হবে তা আমার আগে থেকেই জানা ছিল। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনাদের অবশ্যই গোসল করতে হবে; কিন্তু প্রতিবারই যে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে প্রসাধনী ব্যবহার করে লম্বা সময় ধরে গোসল করতে হবে এমনটা নয়।
প্রতিদিন গোসলের অভ্যাসটি আমি বাইরে থেকে আমদানি করেছি। ছোটকালে আমি সপ্তাহে একবার গোসল করতাম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি যে ভবনে থেকেছি, পুরো একটা বছর জানতামই না সেখানকার গোসলখানার অবস্থান। বিষয়টি নিঃসন্দেহে খুব বাজে। এতে নিজের ভেতর কম-বেশি আত্মি-বিদ্বেষ জন্ম নিত। আর যেসব লোকেদের দেহ থেকে সবসময় সুগন্ধ বের হতো তাদের প্রতি সহানুভূতি অনুভব করতাম।
একবার এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম এবং তিনিই আমাকে প্রতিদিন গোসলের কার্যকারিতা বুঝিয়ে বলেন এবং গোসল সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে দেন (এজন্যেই বলেছি অভ্যাসটি আমি বাইরে থেকে আমদানি করেছি)।
তার পরামর্শ শুনে আমি প্রশ্ন করি, ‘আমি যদি সারাদিন কিছু নাও করি, তবেও কি গোসল করতে হবে?’
‘আপনি যদি কিছু একটা করেন তবে আপনাকে দুইবার গোসল করতে হবে’
‘তবে কি পরপর দুইবার গোসল করতে বলছেন?’
‘পরপর দুইবার নয়, ঘুম থেকে উঠার পর একবার আর কাজ শেষে আরেকবার’, এই ছিল তার জবাব।
প্রতিদিন গোসল করা বোকামি মনে হতে পারে, কারণ আপনার শরীর একসময় এতে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং একপর্যায় এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু জেনে নেয়া উচিত, এই গোসলের বহুরকম পদ্ধতি প্রচলিত। আর গোসল সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণাও রয়েছে।
আপনারা যারা গোসল নিয়ে গবেষণা করে সময় ব্যয় করতে চাননা তাদের বলছি, যদি শাওয়ারের নিচে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরেন এবং চুল ধুয়ে নেন তবে আপনার গোসল হয়ে যাবে। গোসলে গিয়ে চুল ধোঁয়ার বদলে কেবল পানিতে ভিজে আসার নাম ‘আধা-গোসল’। আরেকটি গোসল আছে যেখানে আপনি সিংকের সামনের দাড়িয়ে শরীরে পানি ছিটাতে থাকেন। এটাকে বলা হয় ‘ফ্রেঞ্চ শাওয়ার’, যদিও শব্দটি অপমানজনক অর্থে ব্যবহার করতে দেখা যায় তরুণ প্রজন্মকে।
আপনি যদি চুলে এবং গায়ে কেবল প্রসাধনী মেখে এর নাম দেন গোসল, সেটিও ভুল বলা যায় না। গায়ে সুগন্ধি মেখে চুলে শ্যাম্পু স্প্রে করার নাম দেয়া যেতে পারে ‘পবিত্রকরণ’। আপনি যদি শাওয়ার নেয়ার বদলে সমুদ্রে ডুব দিয়ে আসতে চান, তবে সেটিও চলবে। শাওয়ারের নিচে না দাঁড়ালে আপনার গোসল হবে না- প্রচলিত এই ধারণাটি একদম ভুল। অসুস্থ হলে বা ভালো অনুভব না করলে শাওয়ার না নিয়েও থাকা যাবে।
ব্রিটিশ নাগরিকদের গোসলের পরিসংখ্যানটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ৭৫ শতাংশ লোক এখনও প্রতিদিন গোসল করছেন এবং ৮৬ শতাংশ লোক গোসলের প্রসাধনী ব্যবহার করছে। পরিস্থিতি কবে ভালো হবে কেউ জানি না। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, প্রচুর সংখ্যক মানুষ বাড়ি বসে থাকলেও নিজেদের শরীর এমনভাবে পরিষ্কার রাখছেন, যাতে যে কোনো মুহূর্তে অফিসে চলে যেতে পারেন। যেমনটা দেখাচ্ছে বিষয়টি তেমনটাই স্বাভাবিক।
মূল: জো উইলিয়ামস, দ্য গার্ডিয়ান
অনুবাদ: টিভিথ্রি বাংলা