বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য (ইউকে) কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। এ অবস্থায় টিকটক, টুইটার, ফেসবুক, গুগল থেকে শুরু করে অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে রয়েছে। নতুন আইন প্রবর্তনের পর টিকটক, টুইটার, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামকে ইইউর কনটেন্ট ফেডারেশন আইন ‘ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্ট’-এর অধীনে আরো কড়া নিয়ম মেনে চলতে হবে।
ইইউ কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণে ১৯টি বৃহত্তম অনলাইন প্লাটফর্ম ও সার্চ ইঞ্জিনের তালিকা। কমিশনের নতুন আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভ্রান্তিমূলক কনটেন্টের লাগাম টানতে ও অবৈধ কনটেন্ট অপসারণের জন্য ডিজিটাল আইনের অধীনে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে অনলাইন প্লাটফর্মকে অতিরিক্ত বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করতে হবে। এটি কার্যকর হবে চলতি বছরের শেষদিকে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার এরই মধ্যে খসড়া আইন তৈরি করেছে। অনলাইন স্ক্যাম, প্রতারণা পর্যালোচনা ও ডিজিটাল প্রতিযোগিতা থেকে ভোক্তাদের সুরক্ষিত রাখতে নিয়ন্ত্রকদের আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্ষমতা প্রদান করে। ইইউর কমিশনের প্রধান থিয়েরি ব্রেটন অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ সম্পর্কে বলেন, ‘ডিজিটাল সার্ভিস আইনের পরিপালন নিশ্চিত করতে টিকটকের কার্যক্রম ঘিরে ইউরোপীয় কমিশনের কর্মকর্তাদের “স্ট্রেস টেস্ট’’ পরিচালনার অনুমতি দেবে।’
চলতি বছরের শুরুতে ব্রাসেলসে টিকটকের সিইও স্যু জি চিউর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় থিয়েরি ব্রেটন এ সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি খুশি যে তারা আগ্রহী বলে আমাদের কাছে ফিরে এসেছে।’ যদিও টিকটকের পক্ষ থেকে মন্তব্য চেয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, এর আগে টুইটার স্ট্রেস টেস্টে সম্মত হয়েছিল। ব্রেটন জানান যে তিনি ও তার দল জুনের শেষে সানফ্রান্সিসকোতে কোম্পানিটির সদর দপ্তর পরিদর্শনে যাবেন। যদিও তিনি বিস্তারিত কোনো বিবরণ দেননি যে পরীক্ষায় কোন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আসছে ২৫ আগস্ট থেকে বৃহৎ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের আরো নিয়ন্ত্রণ দিতে হবে, যাতে অবৈধ কনটেন্ট ও ঘৃণা ছড়ানোর মতো বেআইনি বিষয়বস্তুর বিপরীতে অভিযোগ করা সহজ হয়। এছাড়া অনলাইন প্লাটফর্মের সিস্টেম কেন নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুকে আরো বেশি সুপারিশ করে সে সম্পর্কেও তথ্য প্রদান করতে হবে।
এ নিয়ে ব্রেটন বলেন, ‘অনলাইন প্লাটফর্মগুলোকে তাদের সিস্টেমকে “সম্পূর্ণভাবে পুনরায় ডিজাইন’’ করতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাই করাসহ শিশুদের জন্য উচ্চ স্তরের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।’
এ সময় তিনি আরো উল্লেখ করেন যে বিগ টেক কোম্পানিগুলোকে ‘বিভ্রান্তির অ্যালগরিদমিক পরিবর্ধন রোধ করতে’ তাদের সিস্টেমগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। আসছে সেপ্টেম্বরে স্লোভাকিয়ায় নির্বাচন ঘিরে ফেসবুকের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ফেসবুক বড় অনলাইন প্লাটফর্ম। এ অবস্থায় মেটাকে এর সিস্টেমটি সাবধানতার সঙ্গে পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি যত দ্রুত প্রয়োজন তা ঠিক করতে হবে বলেও মনে করেন ইইউর এ কমিশনার। যদিও ফেসবুকের মূল সংস্থা বলেছে যে তারা ইইউর নতুন ডিজিটাল সার্ভিস অ্যাক্টকে সমর্থন করে।
তবে নতুন আইন প্রবর্তনের পর তা লঙ্ঘনের দায়ে কোম্পানির বার্ষিক বৈশ্বিক রাজস্বের ওপর ৬ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। যার পরিমাণ কোটি ডলারের বেশি। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইউরোপে তাদের নিষিদ্ধও করা হতে পারে।
নতুন নিয়ম অনুসারে, যুক্তরাজ্য সরকার আইন অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এর বার্ষিক বৈশ্বিক রাজস্বের ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন এ প্রস্তাবের অধীনে অনলাইন প্লাটফর্ম ও সার্চ ইঞ্জিনগুলো তাদের অ্যাপ স্টোর ও মার্কেটপ্লেসগুলো কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আরো স্বচ্ছ ধারণা প্রদান করবে।
তবে নতুন নিয়মগুলো প্রবর্তনের ক্ষেত্রে কমিশনকে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে ও সংসদীয় অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড বা ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার আইনটি তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই ভোক্তাদের অনলাইন সুরক্ষায় বিষয়ে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করেছে ইউরোপ। নতুন এ পদক্ষেপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বড় ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর ক্ষমতাকে লাগাম দেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে ইউরোপের খ্যাতিকে মজবুত করতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।