মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন চরমে, তখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের অবস্থান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। একদিকে তিনি বলছেন, “উত্তেজনা প্রশমন চাই”, অন্যদিকে আবার জেট ফাইটার, রিফুয়েলিং এয়ারক্রাফটসহ সামরিক সরঞ্জাম পাঠাচ্ছেন যুদ্ধের ময়দানে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্টারমারের এই দ্বিমুখী অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের ইরানে হামলার পর তেহরান হুঁশিয়ারি দেয়, যদি কোনো পশ্চিমা রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেয়, তাহলে তাদের ঘাঁটিও হামলার লক্ষ্যবস্তু হবে। এর পরপরই যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা “কনটিনজেন্সি সাপোর্ট” অর্থাৎ সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত জেট এবং সামরিক সম্পদ মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাচ্ছে।
তবে, কেয়ার স্টারমার বারবার শান্তি ও কূটনীতির কথা বললেও সরাসরি প্রশ্নের জবাবে বারবার এড়িয়ে গেছেন—যুক্তরাজ্য ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেবে কি না। অথচ, তাঁর সরকারের তরফ থেকেই জানানো হয়েছে, ‘প্রস্তুতি চলছে’, ‘অস্ত্র ও জেট মোতায়েন শুরু হয়েছে’।
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের নেতানিয়াহু, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ একাধিক বিশ্বনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। অথচ, কী আলোচনা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে আগে থেকে জানত কি না—এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি একেবারে চুপ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্টারমারের বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি যেন একদিকে শান্তির পক্ষে কথা বলে রাজনৈতিক অবস্থান রক্ষা করছেন, অন্যদিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বাস্তবে ভিন্ন বার্তা দিচ্ছেন। এটিকে ‘রাজনৈতিক দ্বিমুখিতা’ বলেই উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের গবেষক বুরচু ওজচেলিক বলেন, “তেহরান এখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে রয়েছে। যুক্তরাজ্য যদি দ্ব্যর্থহীনভাবে নিজেদের অবস্থান না জানায়, তাহলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে।”
চ্যাথাম হাউসের বিশ্লেষক মারিয়ন মেসমারও বলেন, “ইরানের হুমকি শুধু রাগ থেকে নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে আগাম সতর্কবার্তা। যুক্তরাজ্য যদি কৌশলগত দ্ব্যর্থতা দেখায়, তাহলে সেটা সংঘাতকে ঠেকানোর পরিবর্তে উসকে দিতে পারে।”
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য কি সত্যিই শান্তির পথে, নাকি তারা অদৃশ্যভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিচ্ছে?
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১৫ জুন ২০২৫