5.3 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
প্রবাসে বাংলাদেশশীর্ষ খবর

কোভিডের চিকিৎসায় আমেরিকায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ফার্মা প্রতিষ্ঠা করেছেন কুষ্টিয়ার সাদী

বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা ডা. সাদী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ও উদ্যোক্তা। ১৯৯২ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান সাদী। এর আগে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেডিসিনে পড়াশোনা করেন। কয়েক সপ্তাহ আগেও বাংলাদেশিরা ডা. সাদীর সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না। তার বন্ধু শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ডা. সাদী ও টেভোজেন বায়ো স্বাস্থ্য খাতে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এরপরই ছড়িয়ে পড়ে তার নাম।

 

প্রায় দুই দশক বড় বড় ফার্মা কোম্পানিতে কাজ করার পর ২০২০ সালের জুন মাসে টেভোজেন বায়ো প্রতিষ্ঠা করেন সাদী। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শেয়ারের মালিক। টেভোজেন বায়োর কোনো পণ্যই আসলে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় না। তারপরও প্রতিষ্ঠানটির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪.২৫ বিলিয়ন ডলার।

 

কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলো?

এর একটি কারণ হলো টেভোজেন বায়োর তৈরি নিরাপদ টি সেল। টি সেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সহজাত অংশ। আমাদের কোষে সংক্রমণের পর একমাত্র টি সেলই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। বিভিন্ন রোগে ইতোমধ্যে টি সেল থেরাপির ব্যবহার দেখা গেলেও এর দাম যেমন বেশি, তেমনি ব্যবহারও সীমিত, কেননা থেরাপিটি নিজেই অনেকসময় শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 

তবে ট্রিটমেন্টটাই পুরো বিষয় নয়। টেভোজেন বায়ো মূল যে আকর্ষণ তৈরি করেছে তা হলো তারা নাটকীয়ভাবে এই চিকিৎসার খরচ কমিয়ে আনার আশা দেখিয়েছে। যার ফলে অসংখ্য মানুষ সহজেই এই চিকিৎসা নিতে পারবে। একইসঙ্গে কোম্পানির জন্যও লাভ করা সহজ হবে।

 

ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পন্ন করতে টেভোজেন ৪৮৯-এর প্রায় ১৮ মাস সময় লেগেছে, যেখানে অধিকাংশ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ট্রায়ালে ৭ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। অন্যদিকে, কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের বিকাশে সাধারণত ২.৬ বিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হয়। অথচ ডা. সাদীর ভাষায়, টেভোজেনের জন্য এর খুব ছোট্ট একটি অংশের প্রয়োজন পড়েছিল। সত্যি বলতে কী, ডা. সাদীর কাছে (আটটিসহ) যে তিনটি পেটেন্ট আছে, সেগুলো ‘উৎপাদন ক্ষমতা কমানোর ওপরই’।

 

এছাড়া টেভোজেন ৪৮৯ সহজলভ্য চিকিৎসা। এর জন্য বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে থেরাপি নিতে হবে না। যেকোনো ডাক্তার এটি প্রেসক্রাইব করতে পারবেন।

 

‘আমি আসলে এমন কিছু বানাতে চাই না যার জন্য রোগীদের আধামিলিয়ন ডলার খরচ পড়বে। কিন্তু দাম ঠিকমতো নির্ধারণ না করলে আমার নিজের ব্যবসাই গুটাতে হবে। এটা উভয় সংকট,’ বলেন সাদী।

 

‘ওষুধের খরচ কমাতে আমাকে বিজ্ঞানের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। তাছাড়া আমি ১০-১৫ বছর সময়ও নিতে পারছিলাম না। যা করার, আমাকে তাড়াতাড়ি করতে হতো। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর আমাদের পণ্যের মূল্য এখন সবার হাতের নাগালেই থাকবে,’ বলেন তিনি।

 

ডা. সাদী ও টেভোজেন বায়ো উভয়েই এখন যুক্তরাষ্ট্রের বায়ো-টেক ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে আলোচিত নাম। প্রতিষ্ঠানটি পণ্যকে শুধু লাভজনক সুলভ ও কার্যকর করার প্রতিশ্রুতিই দিচ্ছে না, তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান বৈষম্যের ওপরও আলোকপাত করেছে।

 

বড় ফার্মাগুলো সাধারণত বৈষম্যের কথা বিবেচনা করে না। এমনকি তারা শোষণমূলক কাজের জন্য সমালোচনার শিকারও হয়ে থাকে। দুই দশক ধরে এহেন ফার্মা জগতের সদস্য হয়েও ডা. সাদীর মাথায় কীভাবে বৈষম্য দূরীকরণের চিন্তা এল?

 

ডা. সাদী আসলে এই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন নিজ জন্মভূমি থেকে। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়, সাদীর বয়স তখন মাত্র ৮ বছর। যুদ্ধ শুরুর পর সেই বিভীষিকার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি।

 

তিনি জানান, ‘যুদ্ধে আমার ১১ মামাকে হারিয়েছি—আমার নানার পরিবারের প্রায় সবাইকে। আমিও ছিলাম এই হত্যাযজ্ঞের মাঝে। আসলে ওরা আমাকে দুবার গুলি করেছিল।’

 

সাদীর ছেলেবেলা কেটেছে কুষ্টিয়ায়—যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ আর দারিদ্র্যের মধ্যে। সেসময় বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জায়গা পেত বাংলাদেশ। সেই স্মৃতিই ডা. সাদীর মনে এতকাল পরেও রয়ে গেছে।

 

‘অন্যদের কথা জানি না, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা আমাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা বাস্তবে রূপ নিত না, যদি না শেখ মুজিব পুরো জাতিকে তার সামর্থ্য বোঝাতে পারতেন। অধিকাংশ মানুষ বর্তমান বাংলাদেশকে মিরাকল বলে। কিন্তু আমি দেখতে পাই একজন নেতার দূরদর্শিতা, যিনি প্রত্যেককে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছিলেন,’ বলেন তিনি।

 

গত আড়াই দশকে ডা. সাদী সানোফি, জেনযাইম, জনসন অ্যান্ড জনসন, সিএসএল বেরিং-এর মতো বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসে স্পেশাল ইউএস গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ি হিসেবেও কাজ করেছে। এখনও ফার্মা নিয়ে কাজ করে যাওয়া ডা. সাদী হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। আর সেটাই তাকে আজ টেভোজেন বায়ো প্রতিষ্ঠার মতো বিষয়ে এতদূর নিয়ে এসেছে। শুধু ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদনই নয়, নাটকীয়ভাবে খরচ কমিয়ে আনাতেও তাই তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।

 

‘বিনয় দেখাচ্ছি না, কিন্তু যখন ভাবি তখন মনে হয় আমার তো এই অবস্থায় আসার কথা ছিল না। তখনকার সবচেয়ে দরিদ্র দেশে ছেলেবেলা কাটানো মানুষটিই ইয়েল-হার্ভার্ডে পড়াশোনা করে বিশ্বের ৫১টি দেশে কাজ করেছে, ৯টি দেশে থেকেছে। আসলে নিয়তি আমার প্রতি সহায় ছিল,’ বলেন রায়ান সাদী।

 

১৪ নভেম্বর ২০২২
সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

আরো পড়ুন

বাঁধাধরা চিন্তাধারার বিপরীতে ‘হিজাবী র‍্যাপার’ সানিয়ার সাফল্য

অনলাইন ডেস্ক

নার্সদের বেতন নিয়ে আলোচনায় রাজি ঋষি সুনাক

চকলেটের স্বাদের রহস্য উন্মোচন বিজ্ঞানীদের

নিউজ ডেস্ক