TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

‘নিষ্ঠুরতা নয়, মানবিকতা চাই’—চ্যানেল অভিবাসন নিয়ে যুক্তরাজ্যের গ্রিন পার্টি নেতা পোলানস্কির বার্তা

গ্রিন পার্টির নেতা জ্যাক পোলানস্কি চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের জন্য মানবিক ও সহানুভূতিশীল ব্যবস্থায় সরকারি অর্থ ব্যয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। বড়দিন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া তার প্রথম ভাষণে তিনি করদাতাদের ৪৭৬ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থ ‘নিষ্ঠুরতা’ থেকে সরিয়ে ‘দয়া ও মানবিকতা’র ভিত্তিতে নতুন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের দাবি তোলেন।

 

গ্রিন পার্টির হিসাবে উল্লেখ করা এই অর্থ মূলত সাবেক কনজারভেটিভ সরকারের নেওয়া তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের অংশ, যার উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সকে চ্যানেল পাড়ি ঠেকাতে সহায়তা করা। প্রকল্পটির আওতায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১৮৪ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল, যাতে সৈকতে টহলরত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দ্বিগুণ করা, যৌথ কমান্ড সেন্টার এবং আটক কেন্দ্র স্থাপনের কথা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উৎসবের আগমুহূর্তে তিন দিন ‘কালে’ অবস্থান করে পোলানস্কি দাবি করেন, ব্রিটিশ করদাতাদের অর্থে পরিচালিত ফরাসি পুলিশ অভিবাসীদের তাঁবু কেটে দিচ্ছে এবং শীত থেকে বাঁচতে ব্যবহৃত কাঠ জব্দ করছে। এসব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতাই তার ভাষণের মূল প্রেরণা বলে জানান তিনি।

বড়দিনের দিন বিকেল ৩টায়, রাজার ভাষণের একই সময়ে প্রচারিত তার পূর্ব-রেকর্ড করা বার্তায় পোলানস্কি বলেন, টিকে থাকার চেষ্টা করা মানুষদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরতা বন্ধ হওয়া উচিত। তার ভাষায়, ‘নৌকা থামানো’ বা ‘চোরাচালানকারী চক্র ভাঙা’র মতো স্লোগান বাস্তবে কোনো ফল দিচ্ছে না।

পোলানস্কি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য তিনি যেভাবে দেখেছেন, তা নিষ্ঠুর বা হৃদয়হীন কোনো দেশ নয়। সাধারণ মানুষ যদি অভিবাসীদের বাস্তব পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করত, তবে তারা মুখ ফিরিয়ে নিত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, বর্তমান নীতির বদলে মানবিক ও সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়াই কার্যকর সমাধান হতে পারে।

গ্রিন পার্টি নেতা নিজেকে প্রকাশ্য রিপাবলিকান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তার ভাষায়, রাজতন্ত্র সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের একটি স্পষ্ট প্রতীক। যদিও এটিকে তিনি তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয় বলে উল্লেখ করেছেন, তবুও নীতিগতভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পক্ষে তার অবস্থান স্পষ্ট।

এদিকে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় মানবাধিকার সনদে (ECHR) থাকা না থাকা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টি ও রিফর্ম ইউকে উভয়েই অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই সনদ থেকে সরে যাওয়ার কথা বলেছে, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে সমতা ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মেরি-অ্যান স্টিফেনসন অভিবাসীদের দানবায়নের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। তার মতে, অভিবাসনকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হলে শুধু অভিবাসীদেরই নয়, বরং জাতিগত সংখ্যালঘু ব্রিটিশ নাগরিকদের জীবনও কঠিন হয়ে ওঠে।

প্রায় চার মাস আগে নেতৃত্বে আসার পর জ্যাক পোলানস্কির অধীনে গ্রিন পার্টির সদস্যসংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। সাম্প্রতিক জরিপে দলটি ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে লেবার পার্টির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে, যা যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিবাসন ও মানবিক নীতি নিয়ে নতুন মাত্রার বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে

আরো পড়ুন

অভিবাসনে লক্ষ্যমাত্রা নয়, বাস্তবমুখী পদক্ষেপই লেবার সরকারের অঙ্গীকারঃ ইয়ভেট কুপার

যুক্তরাজ্যে বন্ধ হতে যাচ্ছে সিগন্যালের কার্যক্রম

যুক্তরাজ্য সরকার রুয়ান্ডা নীতিতে আদালতের রায় নিয়ে বেকায়দায়