TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে যুক্তরাজ্যকে ‘এআই সুপারপাওয়ার’ বানানোর ঘোষণা

যুক্তরাজ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে যুগান্তকারী বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। মাইক্রোসফট, গুগল, এনভিডিয়া এবং ওপেনএআইসহ একাধিক মার্কিন টেক জায়ান্ট যুক্তরাজ্যে ডেটা সেন্টার, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নে কয়েক দশক বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করবে।

সবচেয়ে বড় ঘোষণা এসেছে মাইক্রোসফট থেকে। প্রতিষ্ঠানটি ৩০ বিলিয়ন ডলার (২২ বিলিয়ন পাউন্ড) ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তাদের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিনিয়োগ। এটি যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ডের “টেক প্রস্পেরিটি ডিল”-এর অংশ, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরের সময় স্বাক্ষরিত হয়।

এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াং যুক্তরাজ্যকে “এআই সুপারপাওয়ার” ঘোষণা করে বলেন, দেশটির প্রযুক্তি খাত এখন বৈশ্বিক অগ্রগতির কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠতে চলেছে। অন্যদিকে, মাইক্রোসফট প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা আশা প্রকাশ করেছেন যে এই বিনিয়োগ দেশের প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতায় বিপ্লব ঘটাবে। তিনি এটিকে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের উত্থানের সমতুল্য অর্থনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে বর্ণনা করেন।

গুগল আগামী দুই বছরে এআই গবেষণা ও অবকাঠামোতে ৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এনভিডিয়া জানিয়েছে, তাদের অংশীদারদের সঙ্গে মিলে ১১ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি একে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এআই অবকাঠামো সম্প্রসারণ বলে উল্লেখ করেছে।

এই বিনিয়োগের আওতায় এসেক্সে একটি নতুন সুপারকম্পিউটার নির্মিত হবে। পাশাপাশি নর্থাম্বারল্যান্ডে “স্টারগেট ইউকে” প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যেখানে অংশীদার হয়েছে ওপেনএআই, এনভিডিয়া, আর্ম ও এনস্কেল। ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, এই প্রকল্প বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।

সরকার বলেছে, উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডকে “এআই গ্রোথ জোন” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি নতুন চাকরি সৃষ্টি এবং বিলিয়ন পাউন্ড বেসরকারি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এই চুক্তি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।

তবে সমালোচকরা এআই খাতে সম্ভাব্য বুদবুদ এবং উচ্চ জ্বালানি খরচের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। প্রচারাভিযানকারী সংগঠন ফক্সগ্লোভ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে এই প্রকল্পগুলির বিদ্যুৎ ব্যয়ের বোঝা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হতে পারে।

এদিকে প্রযুক্তি সচিব লিজ কেনডাল নিশ্চিত করেছেন, এই চুক্তির অংশ হিসেবে বড় প্রযুক্তি কোম্পানির জন্য কর মওকুফ বা কপিরাইট সংক্রান্ত কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স এবং এআই কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।

 

টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট এ ঘটনাকে “যুগান্তকারী মুহূর্ত” বলে অভিহিত করেছে, তবে তারা জোর দিয়েছে পরিকল্পনা সংস্কার, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের উপর। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাজ্য শুধু ইউরোপেই নয়, বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতেও শীর্ষ অবস্থান দখল করবে।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে রয়্যাল অ্যাসকটে রাজকীয় শূন্যতাঃ রাজকুমারী ক্যাথরিনের অনুপস্থিতি জাগাল প্রশ্ন

যুক্তরাজ্যের টিপটনে পুরনো লিডল ভেঙে দ্বিগুণ আকারের নতুন সুপারস্টোর নির্মাণ

নাইজাল ফারাজের টরি-রিফর্ম কোয়ালিশন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

নিউজ ডেস্ক