যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বেনিফিট সিস্টেমের জটিলতার কারণে প্রতি বছরে প্রায় ১৯ বিলিয়ন পাউন্ডের ফান্ড ব্যবহার হয় না। যদিও অনেক বাড়ির মালিক সেই প্রপার্টি হতে হাউজিং বেনিফিট ক্লেইম করার অনুমোদিত এবং অনেক জনগণ ফুড ব্যাংকের খাবার ব্যবহার করে জীবন পরিচালিত করছে তাও বেনিফিট ক্লেইম করার জটিলতার কারণে ফান্ড অব্যবহৃত থাকছে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি বেনিফিট নেয়ার সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অন্যান্য নগদ সহায়তা দাবি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে বেনিফিট সিস্টেমের জটিলতাকে দায়ী করা হয়, এছাড়া রয়েছে জনসচেতনতার অভাবও।
সমীক্ষা হতে অনুমান করা যায় প্রায় ১.৩ মিলিয়ন পরিবার ইউনিভার্সেল ক্রেডিটের জন্য আবেদন করে না। যার ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ইউনিভার্সেল ক্রেডিটের অব্যবহৃত থাকে। প্রায় ৩ মিলিয়নের মতো যোগ্য পরিবারগুলি কাউন্সিল ট্যাক্স বেনিফিটের জন্য আবেদন করে না কিংবা সাপোর্ট গ্রহণ করে না।
পলিসি এণ্ড প্র্যাক্টিস বিভাগের ডাইরেক্টর দেবেন ঘেলানি বলেন, ” এটি হতবাক করে যে বেনিফিট ফান্ডের প্রায় ১৯ বিলিয়ন পাউন্ড অব্যবহৃত থাকে আবেদন না করার কারণে। তাও ঘটনা এমন সময় ঘটছে যখন মানুষের নিজের জীবন চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে। এই সুবিধাগুলো পেলে তারা অন্তত কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতো।”
বেনিফিট পরামর্শদাতাদের মতে, এই অল্প টাকার বেনিফিট ক্লেইম করলে পরিবারগুলো নিজেদের সন্তানদের জন্য খাওয়ার কিনতে, হিটিং সার্ভিস চালু রাখতে কিছুটা স্বস্তি পেতো। এখনের এই অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ১০ বা ২০ পাউন্ড সপ্তাহে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে পেনশনাররাও অর্থের অভাবে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন এমন কি অনেক ক্ষেত্রে তারাও সঠিকভাবে বেনিফিট ক্লেইম করছেন না। একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে গবেষণায় কেন্টের একজন পেনশনভোগীর কথা উল্লেখ করা হয় যিনি ১৩৮ পাউন্ডের প্রতি সপ্তাহের বেনিফিট সঠিক আবেদন না করার কারণে পাচ্ছিলেন না।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আনুমানিক ৮,৫০,০০০ পেনশনার পরিবার সঠিক আবেদন না করার কারণে পেনশন ক্রেডিটের বার্ষিক ১.৮ বিলিয়ন পাউন্ড অব্যবহৃত রেখে দিচ্ছেন। কিন্তু সরকার কর্তৃক এই অর্থ অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সমর্থন করার জন্যই ডিজাইন করা হয়েছিল।
সঠিক বেনিফিট যাতে জনগণের কাছে পৌঁছে সেইজন্য সরকারের পক্ষ হতে প্রচার করা জরুরি বলে মতামত দেন বিশেষজ্ঞরা। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ” বেনিফিট দাবি করার সাথে কলঙ্ক এবং লজ্জার কোনো সম্পর্ক নেই এই বার্তা জনগণের নিকট পৌঁছানো উচিত। বেনিফিট হলো সঠিক দাবিদারদের জন্য তাদের অধিকার।”
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায়, লক্ষ লক্ষ নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলি গত ১৮ মাস ধরে আর্থিকভাবে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেহেতু এনার্জি বিল এবং খাদ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। অনেক পরিবার খাদ্য ব্যাংক হতে নিজেদের খাবার ব্যবস্থা করে সংসার চালিয়েছে। এমন অনেক পরিবার পাওয়া যায় যাদের পরিবারের এক পঞ্চমাংশ সদস্য ক্ষুধার্ত অবস্থায়ও রাত্রি নিবারণ করেছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাটি অত্যন্ত জটিল সিস্টেমে গড়া হয়েছে। অত্যন্ত জটিল হওয়ার কারণে অনেকে আবেদন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। বেনিফিট ব্যবস্থা সহজ করার জন্য জাতীয় এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থার একত্রে কাজ করা উচিত। সিস্টেমের অনেক পাতার এপ্লিকেশন সিস্টেমেই গলদ রয়েছে। তাই সব বিষয়েই বিবেচনায় আনা উচিত।
ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনের বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “ আমরা দুর্বল পরিবারগুলিকে সহায়তা করতে এবং প্রত্যেককে তাদের যে সমর্থন পাওয়ার অধিকার তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এইজন্য সরকারের স্বতন্ত্র বেনিফিট ক্যালকুলেটর রয়েছে এবং নাগরিকদের পরামর্শের প্রদানের জন্য বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করে যাচ্ছে।”
উল্লেখ্য যে অতিরিক্ত প্রশ্ন কিভাবে এড়ানো যায় এবং আবেদন ফর্ম কিভাবে আরো সহজ করা যায় সেই বিষয়ে সরকার ইতিমধ্যে পর্যালোচনা করছে বলে সরকারের একজন মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন।