33.2 C
London
July 1, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্র্যাডফোর্ডে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রবাসী স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায় স্বীকার

যুক্তরাজ্যে কেয়ারার ভিসায় আসা এক বাংলাদেশি যুবক প্রকাশ্য রাস্তায় সাত মাসের সন্তানকে প্রমে নিয়ে হাঁটতে থাকা স্ত্রীকে বর্বরভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। নিহত কুলসুমা আক্তার (২৭) এবং অভিযুক্ত হাবিবুর মাসুম (২৬) উভয়েই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন স্বাস্থ্য খাতের কর্মী হিসেবে।

ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্টে বিচারক ও জুরিদের সামনে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, বহু মাস ধরে হুমকি, শারীরিক নির্যাতন এবং মানসিক চাপের শিকার হয়ে স্বামীর বাড়ি ওল্ডহ্যাম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন কুলসুমা। তাকে একটি গোপন নারী আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তবে সেখান থেকেও নিরাপদে থাকতে পারেননি।

২০২৪ সালের ৬ এপ্রিল, শনিবার দুপুর ৩টার দিকে ব্র্যাডফোর্ড শহরের এক দোকানের সামনে কুলসুমা সন্তানকে প্রমে নিয়ে হাঁটার সময় হাবিবুর মাসুম তাকে আক্রমণ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাসুম তার প্যাডেড জ্যাকেটের ভেতর থেকে ছুরি বের করে কুলসুমার মাথা, গলা ও শরীরে একের পর এক আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় কুলসুমা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, আর প্রমটি গড়িয়ে দূরে চলে যায়। পথচারীদের চিৎকারেও থেমে যাননি মাসুম।

আদালতে প্রদর্শিত ভিডিওটি এতটাই মর্মান্তিক যে, অভিযুক্ত নিজেই ডকে দাঁড়িয়ে তা দেখতে অস্বীকৃতি জানান।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি স্টিফেন উড জানান, হাবিবুর মাসুম হত্যার দিন অত্যন্ত হিসাবি ও পরিকল্পিত ছিল। সে বাসে করে ঘটনাস্থলে আসে এবং তার মোবাইল ফোনকে ‘এয়ারপ্লেন মোড’-এ রেখে নিজের অবস্থান গোপন রাখে। হত্যাকাণ্ডের পর তিনদিন পলাতক থাকার পর, তাকে বকিংহ্যামশায়ারের স্টোক ম্যান্ডেভিল হাসপাতালে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, হাসপাতালে মাসুম নিজের দাড়ি কামিয়ে চেহারা পরিবর্তন করে প্রবেশ করেন এবং নতুন পোশাক পরিধান করেছিলেন। খবরে জানা যায়, যখন মাসুম হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে ছিলেন, তখনই হাসপাতালের টেলিভিশনে তার বিরুদ্ধেই পুলিশের খোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রচার হচ্ছিল।

পূর্বেও কুলসুমার ওপর সহিংসতা চালিয়েছেন মাসুম। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে, সন্তান কোলে থাকা অবস্থায় তার গলায় ছুরি ধরে হত্যার হুমকি দেন তিনি। সে ঘটনায় পুলিশ ডাকা হলেও পরে তিনি দাবি করেন, আঘাতের চিহ্ন কুলসুমা নিজেই করেছেন।

সামাজিক সেবাকর্মীদের সহায়তায় কুলসুমাকে আরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছিল এবং হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুইদিন পরেই তার স্থানান্তরের দিন নির্ধারিত ছিল।

আদালতে হাবিবুর মাসুম খুনের অভিযোগ অস্বীকার করে ‘ম্যানস্লটার’ বা অনিচ্ছাকৃত হত্যার দায় স্বীকার করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এটি “ভানভোলা ও ভুয়া আত্মপক্ষসমর্থন”, যেটি একজন হিংস্র, নিয়ন্ত্রণপরায়ণ ও সহিংস মানুষের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা।

বিচার কার্যক্রম এখনও চলছে, তবে এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে চরম উদ্বেগ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৯ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে তুষারপাত ও তুষার ঝড়ের সতর্কতা

নিউজ ডেস্ক

রাজা চার্লসের পর কেট মিডলটনেরও ক্যানসার ধরা পড়ল

যুক্তরাজ্যের ই-ভিসা পরিবর্তন কি অর্থ বহন করে