যুক্তরাজ্য লেবার সরকার ২০২৯ সালের মধ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখার চর্চা বন্ধ করতে চায়। এই লক্ষ্যে তারা দেশজুড়ে ফাঁকা পড়ে থাকা ঘর-বাড়ি অধিগ্রহণ করে সেগুলো পুনর্বাসন কেন্দ্রে রূপান্তরের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকারি অর্থায়নে কাউন্সিলগুলো এসব ফাঁকা ঘর কিনে বা লিজ নিয়ে হোম অফিসের কাছে ভাড়ায় দেবে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৭ লাখ ফাঁকা ঘর রয়েছে, যার মধ্যে লন্ডনেই ৯৪,০০০টি। এই ঘরগুলোর মধ্যে টাওয়ার ব্লক, পুরনো ছাত্রাবাস ও পরিত্যক্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে। এসব ভবন পুনঃব্যবহার করে হোটেল নির্ভরতা কমানোই সরকারের নতুন লক্ষ্য।
সরকারি পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বর্তমানে ৩২,০০০ আশ্রয়প্রার্থীকে ২১০টি হোটেলে রাখা হচ্ছে, যাতে প্রতি রাতে সরকারের ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় £১৪৫ পাউন্ড। অথচ নতুন পরিকল্পনায় এই ব্যয় কমে £১৪ পাউন্ডে নামিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, ফলে বছরে প্রায় £১ বিলিয়ন সাশ্রয় হতে পারে।
অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস এই কর্মপরিকল্পনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এটি দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকা ফাঁকা ঘরগুলোকে চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরকার পরিকল্পনা করেছে যে, নির্বাচিত কাউন্সিলগুলোকে পাইলট স্কিমের আওতায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে, যাতে তারা ঘর কিনে তা সংস্কার করে হোম অফিসের কাছে ভাড়া দিতে পারে। পাশাপাশি, বেসরকারি বাড়িওয়ালাদেরও পাঁচ বছরের গ্যারান্টিযুক্ত ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা বিবেচনাধীন রয়েছে।
তবে এই পরিকল্পনার সমালোচনাও উঠেছে। অনেকে বলছেন, এতে সাধারণ জনগণের জন্য আবাসনের পরিমাণ আরও কমে যেতে পারে এবং বাজারে বাড়িভাড়ার চাপ আরও বাড়তে পারে। আবাসন বিষয়ক দাতব্য সংস্থা Propertymark-এর প্রতিনিধি আঙ্গহারাড ট্রুম্যান এই প্রকল্পকে ‘আকর্ষণীয় কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
২০২৫ সালেই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে ঢোকার রেকর্ড তৈরি হয়েছে— এ পর্যন্ত ২৪,০০০ জন অভিবাসী এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছে। তাই হোটেল নির্ভরতা কমিয়ে বাস্তবসম্মত ও টেকসই আবাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা এখন আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।
সরকারের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আরও মানবিক ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে একে ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক, বিশেষ করে যখন জনগণের আবাসন সংকট বিদ্যমান। বিশ্লেষকদের মতে এখন দেখার বিষয়, সরকার এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে
২৫ জুলাই ২০২৫