যুক্তরাজ্যে ভুয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে গত এক বছরে ১১,৫০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান বাতিল করেছে কোম্পানিজ হাউজ। প্রতারণা, অর্থপাচার ও আর্থিক অপরাধে জড়িত সন্দেহে এসব কোম্পানি রেজিস্টার থেকে মুছে ফেলা হয়।
ন্যাশনাল ইকোনমিক ক্রাইম সেন্টার (NECC) নেতৃত্বাধীন এই অভিযানে অংশ নেয় ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি, HMRC, কোম্পানিজ হাউজ এবং বিভিন্ন পুলিশ বাহিনী। মূলত যেসব প্রতিষ্ঠান কোম্পানিজ অ্যাক্ট ২০০৬ অনুসারে রেজিস্টার্ড অফিসের ন্যূনতম শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের টার্গেট করা হয়।
দুই দিনের অভিযানে মেট্রোপলিটন পুলিশ, সিটি অফ লন্ডন পুলিশ এবং সাউথ ওয়েলস পুলিশ একযোগে ১১টি স্থানে অভিযান চালায়, যেখানে ৩০টি ট্রাস্ট ও কোম্পানি সার্ভিস প্রোভাইডার কার্যক্রম চালাচ্ছিল। একটি লন্ডনের ঠিকানায় একাই ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ কোম্পানি নিবন্ধিত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, যদিও তাদের কোনও বাস্তবিক উপস্থিতি ছিল না।
তদন্তে উঠে আসে, বহু কোম্পানি কেবল কাগজে-কলমে অস্তিত্ব রাখে এবং প্রকৃত ব্যবসায়িক কার্যক্রম নেই। এ কারণে যেসব ব্যক্তি গোষ্ঠীভিত্তিক কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তিনটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ট্রাস্ট ও সার্ভিস প্রোভাইডার।
এছাড়া আরও ২৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং ইনসলভেন্সি সার্ভিসে পাঠানো হয়েছে ফৌজদারি রেফারাল। অভিযানে অপরাধজনিত বিপুল সম্পদ উদ্ধার হয়েছে, যা বর্তমানে সিভিল রিকভারি আইনের আওতায় রয়েছে।
এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ‘ইকোনমিক ক্রাইম অ্যান্ড কর্পোরেট ট্রান্সপারেন্সি অ্যাক্ট’ (ECCTA) বাস্তবায়নের পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। আইনটি কার্যকর হলে কোম্পানি পরিচালক ও এজেন্টদের জন্য পরিচয় যাচাই বাধ্যতামূলক হবে।
তবে কোম্পানিজ হাউজের তথ্য বলছে, ৭ মিলিয়নের বেশি যাদের পরিচয় যাচাই করতে হবে, তাদের মধ্যে মাত্র ২.৮৬ শতাংশ এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ছোট ব্যবসাগুলোর মধ্যে ৮৩ শতাংশ এখনও কোনো যাচাই প্রক্রিয়া শুরুই করেনি।
কোম্পানিজ হাউজের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক মার্টিন সোয়াইন বলেন, “কিছু এজেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধে যুক্ত। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এই কার্যক্রম চলবে।”
ন্যাশনাল ইকোনমিক ক্রাইম সেন্টারের পরিচালক র্যাচেল হার্বার্ট বলেন, “প্রতি বছর £১০০ বিলিয়নের বেশি অর্থ পাচার হয় যুক্তরাজ্যের ভেতর দিয়ে, যার বড় অংশ হয় কোম্পানি ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে। এই দুর্বলতা দূর করাই আমাদের লক্ষ্য।”
ইনসলভেন্সি সার্ভিসের পরিচালক ডেভ ম্যাগ্রাথ বলেন, “১১,৫০০ কোম্পানি বাতিল একটি বড় পদক্ষেপ, যা নিশ্চিত করবে রেজিস্টার কেবলমাত্র প্রকৃত ব্যবসা পরিচালনাকারীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।” সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া ‘প্রতারণা প্রতিরোধে ব্যর্থতা’ আইনসহ অন্যান্য বিধান দ্রুত কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার।
সূত্রঃ ইয়াহু ফাইন্যান্স
এম.কে
১৮ জুলাই ২০২৫