যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো সফলভাবে ধানের ফসল কাটা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড হাইড্রোলজির গবেষকরা। নতুনভাবে তৈরি ছোট ধানের ক্ষেতগুলোতে দেশীয় নয়, বরং ব্রাজিল, কলম্বিয়া ও ফিলিপাইন থেকে আনা জাতের ধান উৎপন্ন হয়েছে। ১৮৮৪ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এই ফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
গবেষণার নেতৃত্বদানকারী পরিবেশবিদ নাদিন মিটসচুনাস জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যে ধান চাষের কথা জানালে সাধারণ মানুষের প্রথম প্রতিক্রিয়া অবিশ্বাসের হয়। তিনি বলেন, “এর আগে কেউ এটি চেষ্টা করেনি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা এমন ফসল পেয়েছি যা ১০ বছর আগে সম্ভব মনে হত না। আগামী এক দশকে ধান আমাদের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত ফসল হতে পারে।”
পরীক্ষামূলক চাষে ধানের চারাগুলো বড়ো ও ঝোপালো হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় দ্রুত উষ্ণায়নকারী জলবায়ু যুক্তরাজ্যে চাষযোগ্য ফসলের সীমা পরিবর্তন করছে। ঐতিহাসিকভাবে, ব্রিটিশ জলবায়ু ধান চাষের জন্য খুব ঠান্ডা এবং পর্যাপ্ত রোদহীন বলে বিবেচিত হত। তবে এই গ্রীষ্মের চরম তাপমাত্রা এবং সমৃদ্ধ মাটিতে পর্যাপ্ত জল সরবরাহ ফসলের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
অধ্যাপক রিচার্ড পাইওয়েল সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাজ্য এখনও ধান চাষের জন্য উপযুক্ত নয়, বর্তমানে বাণিজ্যিক রোপণ কৃষকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যে ধান চাষ বড় পরিসরে লাভজনক হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের চালের বাজার ইতিমধ্যেই ১ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি মূল্যের। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। পরীক্ষামূলক ধান চাষ শুধুমাত্র খাদ্য সরবরাহে নয়, বরং দেশের গুরুত্বপূর্ণ পিটল্যান্ড ইকোসিস্টেমের জন্যও সুবিধা আনতে পারে।
গত শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ জলাভূমি বিলুপ্ত হয়েছে। কার্লিউ পাখি সংরক্ষণবিদ মেরি কলওয়েল উল্লেখ করেন, বিলুপ্তপ্রায় কার্লিউ পাখিরা প্রজনন ঋতুর বাইরে খাবারের সন্ধানে ধানের ক্ষেত ব্যবহার করে। ফলে নতুন ধানের ক্ষেত তাদের জন্য মূল্যবান আবাসস্থল তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাজ্য বার্ষিকভাবে আনুমানিক ৬,৫০,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ টনেরও বেশি চাল আমদানি করে। প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবার চাল ব্যবহার করে থাকে, যা দেশীয় বৈচিত্র্যময় রন্ধনপ্রণালি—বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় ও পূর্ব এশীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে—দ্বারা পরিচালিত। তাই ধান চাষের এই সাফল্য দেশীয় খাদ্য স্থিতিস্থাপকতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্রঃ স্যোশাল মিডিয়া
এম.কে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫