যুক্তরাজ্যে শরণার্থী নীতির কঠোর সংস্কারকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডজুড়ে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। লেবার সরকারের নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এখন থেকে শরণার্থী মর্যাদা স্থায়ী নয়, বরং প্রতি ৩০ মাসে পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে অস্থায়ীভাবেই নবায়ন করতে হবে। এই পরিবর্তন ইতিমধ্যে সিরিয়া ও ইউক্রেন থেকে আগত বাস্তুচ্যুতদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
ক্যান্টারবারিতে বসবাসকারী সিরীয় গবেষক ফাতে শাবান জানান, তার সন্তানরা প্রায়ই প্রশ্ন করে—তাদের কি দেশ ছাড়তে হবে, তারা কি যুক্তরাজ্যে থাকতে পারবে? তিনি বলেন, “সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো, তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর আমারই জানা নেই।” ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যে পরিবারসহ আশ্রয় নেওয়া ড. শাবান আশঙ্কা করছেন, নতুন নীতিমালা তার পরিবারের গড়ে তোলা জীবনকে ‘ধ্বংস করে দিতে পারে’।
সিরিয়ার সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. শাবান জানান, তাকে আসাদ সরকারের বিরোধিতার কারণে “অপরাধী” ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তাঁর পরিবারের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত হয়। দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও চলমান সহিংসতার কারণে তিনি মনে করেন, সিরিয়া এখনো নিরাপদ নয়। তার চার সন্তানই পড়াশোনায় ব্যস্ত—একজন জিসিএসই দিচ্ছে, আর ছোট মেয়ে গ্রামার স্কুলে ভর্তি হওয়ার আশায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “এখন দেশ ছাড়তে হলে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।”
ইউক্রেনের শরণার্থীরাও একই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন, যদিও সরকারের ভাষ্য—ইউক্রেন স্কিমের আলাদা নিয়ম রয়েছে। তবুও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদের বক্তব্য—যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনিয়ানদের ফিরে যাওয়ার নীতি—শরণার্থীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ফোকস্টোনে থাকা ইউক্রেনিয়ান নৃত্যশিক্ষক কাটেরিনা লেভানেতস বলেন, “যুদ্ধ শুরু হওয়ার দিন আমি ছেলেকে বলেছিলাম—‘উঠো, যুদ্ধ শুরু হয়েছে’। আজও সেই মুহূর্ত ভুলতে পারি না।” তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে এসে তিনি নতুন করে জীবন শুরু করেছিলেন, কিন্তু এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্রাইটনে থাকা ইউক্রেনিয়ান মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শক ভ্লাদা বন্দর মনে করেন, অস্থায়ী মর্যাদার কারণে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষমতা শরণার্থীদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তার মতে, দেশে ফিরতে হলে ‘সম্ভাব্য মৃত্যুর ঝুঁকি’ রয়েছে, অথচ যুক্তরাজ্যে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা মানসিকভাবে ‘ছোট একটি মৃত্যুর মতো’ প্রভাব ফেলছে।
সরকার অবশ্য বলছে, পুনর্বাসনের সুযোগ কোনো ‘অধিকার’ নয়, বরং ‘অর্জনযোগ্য একটি সুবিধা’। হোম অফিসের মুখপাত্র জানান, “ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলায় আনা এবং নিয়ন্ত্রণ ফেরানোই আমাদের লক্ষ্য।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

