ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল। এ ভোটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে হাউজ অব কমন্সের ৬৫০ আসনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ইংল্যান্ড, ওয়েলশ, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের ভোটাররা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসন পাওয়া দলই আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠন করবে। বিজয়ী দলের প্রধান নির্বাচিত হবেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বরাবরের মতো এবারো ব্রিটিশ নির্বাচনে মূল প্রতিযোগিতা হবে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল বা কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টির মধ্যে। সেক্ষেত্রে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের মধ্যে কোনো একজন যুক্তরাজ্যের পরবর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এছাড়া স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি), লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি (লিব ডেম), রিফর্ম ইউকে পার্টি ও গ্রিন পার্টির মতো দলগুলোর জন্য এবারের নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা কম হলেও বড় ধরনের প্রভাবক হয়ে উঠার সুযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যের ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণে দেশটির ছোট দলগুলোর পক্ষে বড় দুই দলকে টপকে ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে লিব ডেম, রিফর্ম ইউকে ও গ্রিন পার্টি বরাবরের মতো এবারো ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বেশকিছু আসনে ভাগ বসাতে পারে।
বেশকিছু পর্যবেক্ষকের ভাষ্যমতে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি এবারের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার জোর আশঙ্কা আছে। সেক্ষেত্রে টানা ১৪ বছর প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির কাছে ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে রক্ষণশীলরা। দীর্ঘ সময় টানা ক্ষমতায় থাকলেও এ সময় রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রীদের কেউই খুব বেশি সময় ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। এ ১৪ বছরে রক্ষণশীল দলের নেতা পরিবর্তন হওয়ায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও বদলেছে পাঁচবার।
৪৪ বছর বয়স্ক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ক্ষমতায় আসেন ২০২২ সালের অক্টোবরে। ব্রিটিশ অর্থনীতির বিশৃঙ্খল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার পূর্বসূরি লিজ ট্রাস রক্ষণশীল দলের প্রধানের পদ হারান। তার জায়গায় দলপ্রধান ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট এবং গোল্ডম্যান স্যাকসের সাবেক ফান্ড ম্যানেজার ঋষি সুনাক। বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, যুক্তরাজ্যের টালমাটাল অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। যদিও তার সমালোচকদের দাবি, তার মধ্যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ঘাটতি রয়েছে এবং সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকেও তার অবস্থান অনেক দূরে।
পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির বর্তমান প্রধান এবং ৬১ বছর বয়স্ক আইনজীবী কিয়ার স্টারমার। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ৩৪ প্রার্থী
এবারের নির্বাচনে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিভিন্ন দলের মনোনয়নে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ১১ জনের মতো। তাদের মধ্যে অধিকাংশই মনোনয়ন পেয়েছেন লেবার পার্টি থেকে।
এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মনোনয়ন পেয়েছেন আটজন। এর মধ্যে ছয়জনই নারী। তারা হলেন টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলি, রুপা হক, আফসানা বেগম, রুমি চৌধুরী ও রুফিয়া আশরাফ। তাদের মধ্যে চারজন এরই মধ্যে বিভিন্ন আসনে নির্বাচিত এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলি, রুপা হক ও আফসানা বেগম। ছয় নারী প্রার্থীর বাইরে দলটি থেকে মনোনয়ন পাওয়া অন্য দুই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রার্থী হলেন নুরুল হক আলী ও নাজমুল হোসাইন।
ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আতিক রহমান ও সৈয়দ সাইদুজ্জামান। ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেনের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন ছয় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। তারা হলেন গোলাম টিপু, প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, মোহাম্মদ সাহেদ হোসাইন, ফয়সাল কবির, মোহাম্মদ বিলাল ও হালিমা খান। রিফর্ম পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজ ফরহাদ। লিব ডেমদের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাবিনা খান।
এসএনপির প্রার্থীদের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আছেন শুধু নাজ আনিস মিয়া। আর গ্রিন পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাইদ সিদ্দিকী, সাইদ শামসুজ্জামান শামস ও শারমিন রহমান। আর সোশ্যালিস্ট পার্টির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মমতাজ খানম।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়াই করছেন ১১ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তারা হলেন ওয়ায়েছ ইসলাম, আজমাল মাশরুর, সুমন আহমেদ, সাম উদ্দিন, এহতেশামুল হক, ওমর ফারুক, নিজাম আলী, নূরজাহান বেগম, হাবিব রহমান, আবুল কালাম আজাদ ও রাজা মিয়া।
সূত্রঃ এপি
এম.কে
০৩ জুলাই ২০২৪