যুক্তরাজ্যে এই সপ্তাহে লেবার সরকার পরিকল্পনা বিধির পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, যার ফলে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের স্থানীয় কাউন্সিল এবং মেয়ররা সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের (সিজ) ব্যাপক ক্ষমতা পাবে।
এই পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আর কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন নিতে হবে না, বাধ্যতামূলক জমি অধিগ্রহণ আদেশ (CPO) জারির জন্য। মন্ত্রীরা আশা করছেন, এতে ফাঁকা ও পরিত্যক্ত জমি উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত হবে।
এই পরিবর্তনটি পরিকল্পনা ও অবকাঠামো বিলের অংশ হিসেবে আনা হবে, যা মঙ্গলবার পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হতে পারে। এটি পরিকল্পনা ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে অনুষ্ঠিত গণপরামর্শের (পাবলিক কনসালটেশন) সমাপ্তির পর নেওয়া সিদ্ধান্ত বলে জানা যায়।
CPO বিধির সংস্কারের অংশ হিসেবে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এখন থেকে জমির সম্ভাব্য মূল্য বা “হোপ ভ্যালু” বিবেচনা করার দরকার পড়বে না।
কনজারভেটিভ সরকারের পরিবর্তনের নিয়মানুযায়ী, কাউন্সিল সমূহ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নিয়ে জমির হোপ ভ্যালু উপেক্ষা করতে পারত। কিন্তু লেবার সরকারের নতুন আইন কাউন্সিলগুলোর জন্য একটি সাধারণ নিয়ম প্রবর্তন করবে, যাতে তারা হোপ ভ্যালু না দিয়েই জমি অধিগ্রহণ করতে পারে এবং বাড়ি নির্মাণ করতে পারে।
কাউন্সিলগুলোকে CPO-এর ব্যবহার বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে তারা দ্রুত ও সাশ্রয়ী মূল্যে নতুন বাড়ি এবং বড় অবকাঠামো প্রকল্প (যেমন স্কুল ও হাসপাতাল) নির্মাণ করতে পারে। সরকার বলছে, এটি স্থানীয় অঞ্চলগুলোর পুনর্জাগরণেও সহায়ক হবে।
লেবার পার্টি আগামী সংসদ মেয়াদের মধ্যে ১৫ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যদিও মন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন যে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য। দলটি সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনকে তাদের নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে এবং তরুণদের জন্য বাড়ির মালিকানা অর্জন সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পরিকল্পনা বিলটি মেয়র ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার ব্যাপক পরিবর্তন আনবে, যা গৃহনির্মাণ দ্রুততর করবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হবার সমস্যা দূর করবে। জানুয়ারিতে কিয়ার স্টারমার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যারা বারবার আইনি চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করার চেষ্টা করে (NIMBYs), তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপপ্রধানমন্ত্রী ও গৃহায়নমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনার সোমবার বলেন, “আমরা চাই এই দেশের প্রতিটি অংশে পুনর্জাগরণ হোক। এজন্য আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, সরকারি সংস্থাগুলোর হাতে যথাযথ সরঞ্জাম থাকবে, যাতে তারা ফাঁকা ও পরিত্যক্ত জমি জনস্বার্থে কাজে লাগাতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি, যেখানে জমি চুক্তির মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং এতে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেখানে এই ক্ষমতার ব্যবহার বিবেচনা করা উচিত। এই নতুন ক্ষমতা কাউন্সিলগুলোকে ১৫ লাখ বাড়ি নির্মাণে সহায়তা করবে, যা এক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাশ্রয়ী ও সামাজিক আবাসন উন্নয়ন, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হবে।”
দশ বছর আগে লেস্টার সিটি কাউন্সিল বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণ ক্ষমতা ব্যবহার করে শহরের ওয়াটারসাইড এলাকা পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এতে ১,০০০টি নতুন বাড়ি এবং ৯,০০০ বর্গমিটার অফিস স্পেস তৈরি হয়েছিল।
১৯৮০-এর দশকে স্থানীয় শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার পর এই অঞ্চলটি অবনমনের শিকার হয়েছিল। পরবর্তীতে কাউন্সিল CPO-এর মাধ্যমে ৭ হেক্টর (১৭ একর) জমি অধিগ্রহণ করে পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে নতুন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
১০ মার্চ ২০২৫