12.7 C
London
April 19, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে নারী বিদ্বেষ ও বর্ণবাদের উত্থানঃ শিক্ষকদের হুঁশিয়ারি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন গেমিংয়ের মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অ্যান্ড্রু টেইটের মতো ব্যক্তিদের আচরণে প্রভাবিত হয়ে যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে নারী বিদ্বেষ ও বর্ণবাদের উত্থান ঘটছে বলে সতর্ক করেছেন শিক্ষকরা।

যুক্তরাজ্যের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, খারাপ আচরণের মূল কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেখানে শিক্ষার্থীরা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অ্যান্ড্রু টেইটের অনুকরণ করছে।

শিক্ষকদের সংগঠন NASUWT-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের খারাপ আচরণের “প্রধান কারণ” হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেছেন, যেখানে নারী কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন। শিক্ষকরা এ-ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, অনেক অভিভাবক স্কুলের নিয়ম মেনে নিতে চান না কিংবা নিজেদের সন্তানের আচরণের দায় নিচ্ছেন না।

একজন শিক্ষক সংগঠনকে বলেন, “অনেক ছাত্র অ্যান্ড্রু টেইট ও ট্রাম্প দ্বারা প্রভাবিত। তারা প্রতিটি কথোপকথনে বর্ণবাদী, সমকামবিদ্বেষী, ট্রান্সফোবিক ও নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করে এবং তারা বিশ্বাস করে না যে এর জন্য কোনো শাস্তি হবে।”

NASUWT-এর মহাসচিব প্যাট্রিক রোচ শুক্রবার বার্ষিক সম্মেলনে বলেন, “প্রতিটি তিনজন শিক্ষকের মধ্যে দুইজন বলেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন হয়রানি ও খারাপ আচরণের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

“শিক্ষার্থীরা মনে করে, স্কুলে পুরো সময় মোবাইল ব্যবহার করা তাদের অধিকার। তারা এগুলোর মাধ্যমে পাঠে ব্যাঘাত ঘটায়, অন্যদের হয়রানি করে, খারাপ আচরণ করে বা সহপাঠীদের কাছে নিজেকে হিরো হিসাবে প্রমাণ করতে চায়।”

একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, “আমার ছাত্রদের মধ্যে কিছু ছেলে আমার সাথে কথা বলতে অস্বীকার করে এবং পুরুষ সহকারী শিক্ষকের সাথে কথা বলে, কারণ তারা মনে করে আমি একজন নারী এবং অ্যান্ড্রু টেইট যা বলেন—গাড়ি, নারী আর কীভাবে নারীদের আচরণ করা উচিত তা নিয়ে তা সঠিক। তারা মাত্র ১০ বছর বয়সী।”

অন্য শিক্ষকরা জানিয়েছেন, কিছু ছেলে “নারী কর্মীদের দিকে ঘেউ ঘেউ করে এবং দরজা আটকে দেয়। যা সরাসরি অ্যান্ড্রু টেইটের ভিডিওর প্রভাব।” একজন শিক্ষক বলেন, “শিক্ষার্থীরা হিংসাত্মক এবং চরম পর্নোগ্রাফিক ভিডিও দেখে। তাদের মনোযোগের সময় কমে গেছে। তারা প্রচুর ভুয়া খবর ও অতিরঞ্জিত গল্প পড়ে, যা তাদের মনে করে তোলে তারা শিক্ষকের চেয়েও বেশি জানে।”

রোচ বলেন, মন্ত্রীদের সঙ্গে “ইতিবাচক আলোচনা” হয়েছে, তবে শুধু স্কুল সময়ে মোবাইল নিষিদ্ধ করলেই সমস্যা সমাধান হবে না। “এটা এখন জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে, এর জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা দরকার।”

শিক্ষা বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা জানি, বিপজ্জনক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বগুলোর উত্থান আমাদের শিশুদের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এজন্য আমরা শিক্ষকদের সাহায্য করছি যাতে তারা তরুণদের চরমপন্থা থেকে দূরে রাখতে পারেন, যা আমাদের পরিবর্তনের পরিকল্পনার অংশ।”

“এই কারণেই আমরা শিক্ষকদের সহায়তার জন্য নানা উপকরণ দিচ্ছি, এবং আমাদের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনায় শিশুদের কী দক্ষতা দরকার তা দেখা হবে, যাতে তারা অনলাইনের দ্রুত পরিবর্তনশীল জগতে টিকে থাকতে পারে।”

“এ ছাড়াও অনলাইন নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর শিশুদের জন্য বয়স উপযোগী অনলাইন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা হবে।”

তবে লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলটির শিক্ষা মুখপাত্র মুনিরা উইলসন বলেন, এই সমীক্ষা দেখাচ্ছে, আরও অনেক কিছু করার দরকার আছে। “টক্সিক অ্যালগরিদম অনেক শিশুকে ইন্টারনেটের অন্ধকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে, যেখানে বিপজ্জনক মনোভাব তৈরি হচ্ছে যা বাস্তব দুনিয়ায়, এমনকি স্কুলেও, ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।”

লিভারপুলে NASUWT সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষার্থীর আচরণ নিয়ে অভিভাবকদের ডাকলেই তারা এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক এবং কখনো কখনো সহিংস হয়ে উঠছে।

নরউইচ থেকে আসা প্রতিনিধী লিন্ডসে হ্যাঙ্গার বলেন, ইংল্যান্ডের অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীদের খারাপ আচরণ সহ্য করা হচ্ছে শুধুমাত্র উপস্থিতির হার বাড়ানোর জন্য এবং সাসপেনশন বা বহিষ্কার এড়াতে।

“আমি মনে করি, সরকারকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে—একটা কৌশল দরকার যাতে প্রতিটি অভিভাবককে স্কুলের আচরণবিধি মানতে বাধ্য করা যায়, না হলে তাদের সন্তান শ্রেণিকক্ষে আসার অধিকার হারাতে পারে।”

সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিক্ষা খাতে “নো এক্সক্লুশন” নীতিকে বৈধতা দেওয়ার যে চেষ্টা চলছে, তার বিরোধিতা করবে সংগঠনটি। এই প্রস্তাব বহিষ্কারের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ বা সীমিত করার প্রচারণার বিরুদ্ধে।

রোচ আরও বলেন, শিক্ষকদের জন্য এই বছরে “বাস্তবমূল্যভিত্তিক বেতন বৃদ্ধি চাই” এবং তা পুরোপুরি অর্থায়িত হতে হবে, নইলে শিক্ষকরা কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবেন।

স্কুল উইক পত্রিকাকে রোচ জানান, যদি সরকার স্বাধীন বেতন পর্যালোচনা কমিটির প্রস্তাবিত মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ উপেক্ষা করে, তাহলে NASUWT ইংল্যান্ডে একটি আনুষ্ঠানিক ধর্মঘট আয়োজন করবে।

সম্মেলনে আরও একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে যাতে NASUWT নেতাদের জাতীয় শিক্ষা ইউনিয়ন (NEU) বা অন্য কোনো ইউনিয়নের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে বলা হয়েছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
১৯ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনীয় শরনার্থী প্রবেশে বাঁধা

যুক্তরাজ্যের ত্রিশটি ইংলিশ কাউন্সিল বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ পেল

ব্রিটেনের নয়া আইনে স্বাস্থ্যসেবা সংকটে পড়বে অভিবাসীরা