রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির হাইকমিশনার চ্যাটার্টন ডিকসন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে সামরিক ক্যু’র মাধ্যমে মিয়ানমারে সরকার পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিক্যাব) আয়োজনে ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কোপ সম্মেলন উপলক্ষে ডিক্যাব টক অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। দেশে আগামী নির্বাচন, যুক্তরাজ্যে থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিষয়ে তাদের মনোভাবসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন হাইকমিশনার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত, তা কোনো বিদেশি বলে দেবে না। নির্বাচন সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানেই পরিষ্কার বলা আছে। প্রতিযোগিতা ও সবার ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বার্থে নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হওয়া উচিত।’
যুক্তরাজ্যে বসে যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন, তাদের বিষয়ে ডিকসন বলেন, ‘কেউ বিদ্বেষ ছড়ালে যুক্তরাজ্য তা সমর্থন করবে না।’
যুক্তরাজ্যে বসে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে কিছু বাংলাদেশি। তাদের ফেরত আনার জন্য মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু ওই দেশ থেকে কোনো ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের ওপর নির্ভর করছে বলে জানান রবার্ট ডিকসন। তিনি বলেন, ‘কার কার প্রত্যাবর্তন চাওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে কিছু বলবো না, কারণ তা ঠিক হবে না। তবে প্রত্যাবর্তন একটি আইনি প্রক্রিয়া। অনেক ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন হয়তো দেশের জনগণ চায়, কিন্তু সেটা ব্রিটিশ সরকারের ওপর নির্ভর করে না। করে আদালতের ওপর। সরকারের ওপর নির্ভর করে কোর্ট রায় দেয় না।’ এছাড়া প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে এর সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলো বেশ শক্ত লড়াই করে বলেও তিনি জানান।
হাইকমিশনার বলেন, ‘আদালত অনেক কিছু বিবেচনা করে—যেমন অভিযোগ কী আছে বা ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানো হলে তার কী শাস্তি হতে পারে ইত্যাদি। কাউকে ফেরত পাঠানোর কিছু মেকানিজম আছে। যেমন মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিস্ট্যান্স।’
নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে পরিষ্কার নিয়ম আছে। কেউ যদি ঘৃণা বা উসকানিমূলক মন্তব্য করে তবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যখন কেউ লাল দাগ অতিক্রম করে এবং তা আমাদের জানানো হয়, তখন আমরা বিষয়টি তদন্ত করি।’
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাজ্য পাশে আছে জানিয়ে মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের সঙ্গেও বাংলাদেশের কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
হাইকমিশনার বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যুক্তরাজ্য আশাবাদী। এ সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান হাইকমিশনার ডিকসন।
তবে রোহিঙ্গা শিবিরে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।
আসন্ন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক কোপ সম্মেলন প্রসঙ্গে ডিকসন বলেন, এই সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন এড়াতে যে চারটি লক্ষ্য রয়েছে, তা অর্জনে বিশ্বনেতারা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন, আমি এটাই আশা করি। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রাপ্য সহায়তা পাওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
২৭ অক্টোবর ২০২১
নিউজ ডেস্ক