TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

£৫.৫ বিলিয়ন বিটকয়েন জালিয়াতিঃ লন্ডনে লুকিয়ে থাকা প্রতারকের কারাদণ্ড

চীনের ১ লাখ ২৮ হাজার ভুক্তভোগীকে প্রতারণা করে £৫.৫ বিলিয়নের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন ঝিমিন কিয়ান। পনজি স্কিমের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন এবং ছয় বছর পলাতক ছিলেন।

পাঁচ বছর ধরে পুলিশ তার খোঁজ পাননি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা একটি বিটকয়েন ওয়ালেট হঠাৎ সক্রিয় হওয়ায় তার লোকেশন শনাক্ত করা যায়। এরপর শুরু হয় মানব শিকার অভিযান।

প্রায় এক মাস ধরে পুলিশ কিয়ানের খোঁজ রাখে — লক টে হ্রদের তীরে একটি বাংলো থেকে গ্লাসগোর লাল টাইলের বাড়ি এবং শেষে ইয়র্কের উপশহরের একটি এয়ারবিএনবি পর্যন্ত। এপ্রিলের শেষদিকে ৪৬ বছর বয়সী কিয়ান গ্রেপ্তার হন, তার সঙ্গে চারজন অবৈধ গৃহকর্মীও ছিলেন।

গত মঙ্গলবার সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে কিয়ানকে ১১ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দেন বিচারক। তার সহযোগী মালয়েশিয়ান নাগরিক সেং হক লিং পান ৪ বছর ১১ মাসের সাজা। লন্ডনে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ৬১,০০০-এর বেশি বিটকয়েন, যার মূল্য বিলিয়ন পাউন্ড, এখন আদালতের অধীনে রয়েছে।

কিয়ানের আইনজীবী রজার সাহোটা বলেন, “তিনি কখনো প্রতারণা করতে চাননি, তবে তার বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো প্রতারণামূলক ছিল। তিনি বিনিয়োগকারীদের কষ্টের জন্য গভীরভাবে দুঃখিত।”

ঝিমিন কিয়ান ২০১২ সালে চীনের আনহুই ও জিলিন প্রদেশে ক্ষুদ্র পিরামিড স্কিমে জড়িয়ে পড়েন। ত্রিশের কোঠায় তদন্ত হলেও দোষী সাব্যস্ত হননি। এরপর তিনি চালু করেন বিশাল ক্রিপ্টো প্রতারণা “ব্লু স্কাই” নামে তিয়ানজিনভিত্তিক কোম্পানি, যা ইলেকট্রনিক ব্যবসার আড়ালে চলত।

তার ভুক্তভোগীদের আকৃষ্ট করতেন চটকদার ভিডিও ও বিশাল মুনাফার প্রতিশ্রুতিতে। ব্রিটেন নাইস লাইফ ভিডিওতে লন্ডনের বিলাসবহুল দৃশ্য দেখানো হয়।

কিয়ান প্রতারণা করেছিলেন ১,২৮,০০০ চীনা বিনিয়োগকারীর সঙ্গে। অনেক পরিবার তাদের সঞ্চয় হারিয়েছে। একজন লিখেছেন, “আমাকে আমার বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে, এখন আমার থাকার জায়গাও নেই।” অন্যজন লিখেছেন, “আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে গেছে। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।”

২০১৭ সালে তিনি চীন থেকে পালিয়ে মিয়ানমার হয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান, সঙ্গে মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট। এরপর প্রায় সাত বছর তিনি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বিলাসী জীবন যাপন করেন।

কিয়ান হারডস থেকে প্রায় £৯২,০০০ মূল্যের গয়না ও পোশাক কিনেছেন। বার্লিন, স্টকহোম, কোপেনহেগেন ও কুটনা হোরায় তিনি ভ্রমণ করেছেন। তার ডায়েরিতে ছিল ইউরোপীয় ডিউকের সঙ্গে দেখা করার স্বপ্ন এবং ক্ষুদ্র রাষ্ট্র লিবারল্যান্ডের শাসক হওয়ার কল্পনা।

চীনা কর্তৃপক্ষের ভয় তাকে চীনে যাওয়া সীমিত করেছে। তিনি কখনো সেই দেশে যাননি, যেখান থেকে চীনে প্রত্যর্পণ সম্ভব। তার গৃহকর্মীদের Huawei বা Xiaomi ফোন ব্যবহার না করার নির্দেশ ছিল, এবং তথ্য ফাঁস করলে £১০,০০০ পর্যন্ত জরিমানা ধার্য ছিল।

কিয়ান তার সহযোগী জিয়ান ওয়েন এবং সেং হক লিং-এর সঙ্গে কৌশল করেছিলেন কিভাবে বিটকয়েনকে সম্পদে রূপান্তর করা যায়। তারা যুক্তরাজ্য ও ইতালিতে বাড়ি কেনার চেষ্টা ব্যর্থ হলেও, ২০১৯ সালে দুবাইয়ে দুটি সম্পত্তি কিনতে সক্ষম হন।

২০১৮ সালে £২৪ মিলিয়নের লন্ডন প্রপার্টি কেনার চেষ্টা পুলিশের নজর কেড়ে নেয়। পুলিশের তদন্ত ও অভিযান শেষে ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইয়র্কে কিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে ছিল চারটি অতিরিক্ত ক্রিপ্টো ওয়ালেট, ভুয়া পাসপোর্ট ও নগদ অর্থ।

মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্থনৈতিক ও সাইবার অপরাধ বিভাগের প্রধান উইল লাইন বলেন, “অনেক মানুষ তাদের জীবনভর সঞ্চয় হারিয়েছেন। আজকের রায় ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচারের একটি পদক্ষেপ।”

তিনি আরও বলেন, “অর্থপাচার গুরুতর অপরাধকে টিকিয়ে রাখে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে অপরাধীরা তাদের অর্থ লুকায়। প্রযুক্তি যেমন অপরাধীদের সুযোগ দেয়, তেমনি তাদের ধরার পথও তৈরি করে। প্রতিটি ক্রিপ্টো লেনদেনেরই একটি চিহ্ন থেকে যায়।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

লন্ডনে তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি ছাড়ানোর পূর্বাভাস, হিটওয়েভের শঙ্কা

নারী সম্মান শেখাতে ব্রিটিশ পুলিশের বিশেষ উদ্যোগ, আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি হুঁশিয়ারি

বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে মিথ্যাচার, টিউলিপকে ঘিরে স্টারমারের দুঃস্বপ্ন