5.3 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
আন্তর্জাতিকশীর্ষ খবর

আমেরিকা, কানাডা ও ইংল্যান্ডে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর দরজা বন্ধ: দ্য প্রিন্ট

রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা র-এর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে গত গ্রীষ্মের শুরুতে দেশ ছাড়তে বলেছিল আমেরিকা। গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আমেরিকার আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ দায়েরের আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খালিস্তানপন্থী শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টে এ বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপায়।

এমনকি আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর স্টেশন প্রধানকেও আর নতুন করে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

জানা গেছে, বহিষ্কৃত কর্মকর্তারা ধারাবাহিকভাবে এমন কিছু কাজ করেছিলেন, যা আমেরিকা, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে তিনটি দেশ এই মত পোষণ করে যে, তাদের দেশে র-এর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে অলিখিত নিয়ম রয়েছে, তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য প্রিন্ট জানায়, বহিষ্কৃত দুই কর্মকর্তা হলেন—আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে র-এর স্টেশন প্রধান এবং লন্ডনে সংস্থাটির অপারেশনের দ্বিতীয় ব্যক্তি। এই কর্মকর্তারা পরিচয় গোপন করে কাজ করছিলেন না। দেশগুলো তাদের আসল পরিচয় জানত। এই কর্মকর্তারা ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে (আইপিএস) জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম স্তরের কর্মকর্তা। দ্য প্রিন্ট তাদের নাম গোপন রেখেছে। কারণ, তারা উভয়ই র-এর চাকরিতে বহাল আছেন।

এ ছাড়া ভারত সরকার ওয়াশিংটন ডিসিতে র-এর স্টেশন প্রধানের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। তিনি এ বছরের শুরুতে দেশে ফিরেছিলেন। এই নতুন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে র-এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। এবং র-এর সাবেক প্রধান সামন্ত গোয়েলের অবসরের আগে তার দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল।

সান ফ্রান্সিসকো ও ওয়াশিংটন ডিসি-তে র-এর স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেওয়া, অটোয়াতে সংস্থার স্টেশনপ্রধান পবন রাইকে প্রকাশ্যে বহিষ্কার—এই গোয়েন্দা সংস্থার জন্য অভূতপূর্ব। ৫৫ বছর আগে ১৯৬৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আমলে র-এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম।

মার্কিন আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেছেন—খালিস্তানপন্থী এক আইনজীবীকে হত্যার জন্য নিখিল গুপ্ত নামে এক ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীকে দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার নাম এখনো আমেরিকা প্রকাশ করেনি।

অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নাম উল্লেখ না করা হলেও সরকারি সূত্রগুলো দ্য প্রিন্টকে বলেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা নয়াদিল্লিতে আলাপচারিতায় বলেছেন, ‘র’ শীর্ষস্থানীয় খালিস্তানপন্থী আইনজীবী গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল।

গত জুন মাসে কানাডায় খালিস্তানপন্থী হরদীপ সিং নিজ্জারকে হত্যার পর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নস বিষয়টি নিয়ে তাদের ভারতীয় সতীর্থদের সাথে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তারা ওই কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান বলে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে।

ভারতীয় সরকারি সূত্রগুলো দ্য প্রিন্টকে বলেছে, সান ফ্রান্সিসকোতে র-এর কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের মাধ্যমে আমেরিকা এই বার্তা দিয়েছে যে, ভারত যদি পশ্চিমা দেশে এমন আক্রমণাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যায়, তাহলে তারা ভারতীয় গোয়েন্দাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করবে না। মামলার সাথে সংশ্লিষ্ট এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা দ্য প্রিন্টকে এ কথা বলেছেন।

এমনকি যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা লন্ডন থেকে র-এর একজন কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য কোনো কারণ পর্যন্ত জানায়নি। ওই কর্মকর্তা সেখানে র-এর দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন। এ কথা যুক্তরাজ্য সরকারও জানত।

একাধিক সূত্রের মতে, ব্রিটিশ গোয়েন্দারা শিখদের ওই দেশে বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে র-এর ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততায় বেশ কয়েকবার অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। বিশেষ করে পাঞ্জাব ক্যাডারের আইপিএস অফিসার সাবেক ‘র’–প্রধান সামন্ত গোয়েলের নেতৃত্বেকে যুক্তরাজ্য চ্যালেঞ্জ করে। গোয়েল র-তে যোগদানের আগে খালিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযানে যুক্ত ছিলেন।

র-এর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে প্রচলিত ধারাটি হলো—অতি উৎসাহী গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট দেশের গোয়েন্দারা ডেকে পাঠাবেন এবং তাকে “অগ্রহণযোগ্য কাজ” না করার জন্য সতর্ক করে দেবেন। এ ক্ষেত্রে হালকাভাবে তাকে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন যে, তিনি কিন্তু নজরদারিতে আছেন। যেমনটা ভারতে অন্য দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা থাকেন। আর যদি সমস্যা সত্যিই বাড়তে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার জড়িত হতে পারেন। তবে বিষয়গুলো সাধারণত এত দূর গড়ায় না।’

সূত্রঃদ্য প্রিন্ট

লেখকঃপ্রবীন স্বামী

০২ ডিসেম্বর ২০২৩

আরো পড়ুন

আইন করেও কমানো যাচ্ছে না শরনার্থীদের অবৈধ প্রবেশ

ঝড় ক্রিস্টোফের কারণে ব্রিটেনজুড়ে ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনা

কলকাতার ইডেনে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ানোয় আটক চার