২০২৫ সালের শুরুতে করোনাভাইরাসের একটি নতুন উপধারা এনবি.১.৮.১ প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছে। এই উপধারাটি আগের তুলনায় দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই একে “পর্যবেক্ষণাধীন উপধারা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং জানাচ্ছে, এটি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ সংক্রমণের জন্য দায়ী।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই উপধারাটি ইতোমধ্যে মিশর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, চীন, অস্ট্রেলিয়া এবং হংকংসহ একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনে এনবি.১.৮.১ বর্তমানে সবচেয়ে প্রচলিত করোনাভাইরাস রূপে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইংল্যান্ডে অন্তত ১৩টি এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৭টি সংক্রমণের ঘটনা পাওয়া গেছে। ওয়েলসেও কিছু নমুনায় এই উপধারার উপস্থিতি ধরা পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন রূপের প্রভাব অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়েছে। বছরের শুরুতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটাতো এক্সইসি নামের উপধারা, যা পরে কমে গিয়ে এলপি.৮.১ বেশি ছড়াতে থাকে। কিন্তু এপ্রিলের পর থেকে এলপি.৮.১ এর পরিবর্তে দ্রুত বাড়তে শুরু করে এনবি.১.৮.১।
অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ ও জীবাণুবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লারা হেরেরো জানিয়েছেন, এই নতুন উপধারাটি কোষে আরও দক্ষতার সঙ্গে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। যদিও এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে এটি পূর্ববর্তী উপধারাগুলোর তুলনায় বেশি গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে।
উপসর্গের দিক থেকে এনবি.১.৮.১ পূর্বের ওমিক্রন উপধারাগুলোর মতোই। সাধারণত দেখা যাচ্ছে—গলা ব্যথা, হালকা জ্বর, অবসাদ, পেশির ব্যথা, সর্দি, হালকা কাশি এবং কখনও কখনও হজমের সমস্যা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উপসর্গগুলোর মাধ্যমে আগাম সতর্ক হওয়া এবং প্রয়োজন হলে বাসায় অবস্থান করাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
থাইল্যান্ডে ইতোমধ্যে জনগণকে মুখে মাস্ক পরার, হাত ধোয়ার এবং টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যে এখনো বাধ্যতামূলক কোনো নির্দেশনা দেওয়া না হলেও, সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য গবেষক ড. মাইকেল হেড সতর্ক করেছেন যে, সংক্রমণ যদি বাড়তেই থাকে, তাহলে হাসপাতালসহ নির্দিষ্ট জায়গায় আবারও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হতে পারে।
যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ১.৪৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১.৪০। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা নিয়মিতভাবে ফ্লু ও করোনা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বা বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তবে প্রতিটি দেশকে নিজের মতো করে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যতদিন পর্যন্ত ভাইরাস নতুন রূপে ফিরে আসছে, ততদিন পর্যন্ত জনগণের মধ্যে সচেতনতা, সাবধানতা এবং দায়িত্বশীল আচরণই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে।
সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট
এম.কে
০৮ জুন ২০২৫