8.6 C
London
November 17, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)শীর্ষ খবর

বর্ণবৈষম্যের স্বীকার হওয়ায় হোম অফিসের উপর মামলা করেছেন একজন বৃটিশ নাগরিক

হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত একজন ব্রিটিশ ব্যক্তিকে ভুলভাবে জ্যামাইকায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল। খবরে জানা যায় দোষী ব্যক্তি হোম অফিসের বিরুদ্ধে এখন আইনী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন।
রিচার্ড ওয়ালেস, যার বাবা -মা ১৯৫০ এর দশকে উইন্ডরাশ প্রজন্মের অংশ হিসাবে ব্রিটেনে এসেছিলেন। রিচার্ড ওয়ালেস ১৯৬৯ সালে লন্ডনের প্যাডিংটনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি দক্ষিণ লন্ডনের একটি টেকওয়েতে কর্মরত একজনকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
রিচার্ড ওয়ালেসের সাজা শেষ হওয়ার পরে তাকে ভুলভাবে জ্যামাইকায় ফেরত পাঠানো হয় বলে জানান তিনি নিজেই। ওয়ালেস বলেন তার আইডেন্টিটি ভুলভাবে নেওয়া হয় এবং তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়। রিচার্ডকে ২০১৫ সালে ক্যারিবিয়ান দ্বীপে ফেরত পাঠানো হয়।
তিনি ২০১৮ সালে তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু রিচার্ডকে জাল কাগজ বা পাসপোর্ট ব্যবহারের দায়ে আবারও দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরে তার পরিবারের অন্যান্য ব্রিটিশ সদস্যদের সাথে তার ডিএনএ ম্যাচ করার পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বৃটিশ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তার সাথে আচরণ তাকে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলেছে এবং তিনি বিশ্বাস করেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় তিনি “প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ” এর শিকার হয়েছিলেন।
ওয়ালেসের সলিসিটার নাগা কান্দিয়াহ হোম অফিস এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আইনী মামলা করেছেন। কান্দিয়াহ বলেছেন, ” ভুল আইডেন্টিটির মাধ্যমে তাকে সাজা দেওয়া হয় এমন কি জ্যামাইকাতেও ফেরত পাঠানো হয় যা অমানবিক। রিচার্ড বহু বছর ধরেই এই অবিচার ও অন্যায় সহ্য করেছেন।”
ওয়ালেস তার প্রথম জীবন যুক্তরাজ্যে তার বাবা,মায়ের সাথে কাটান। তার বাবা ছিলেন কাঠমিস্ত্রী   এবং তার মা ছিলেন নার্স। এরপর তিনি মা,বাবার সাথে জ্যামাইকা চলে যান। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ১৮ বছর বয়সে তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন।
পরবর্তীতে রিচার্ড ওয়ালেসের একজন ব্যক্তিকে হত্যার জন্য বিশ বছরের সাজা হয়ে যায়। কারাবাসে ভালো আচরণের জন্য তিনি কিছু সাজা মওকুফ পান। ওপেন ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি সহ অনেক শিক্ষামূলক যোগ্যতার পাশাপাশি তিনি একজন পিয়ার টিউটর হিসাবেও কাজ করেছিলেন কারাগারে। তাছাড়া কারাগারে তিনি দাতব্য সংস্থার সাথেও কাজ করেন।
ওয়ালেস বলেছেন,“ ধরে নিচ্ছি আমি অপরাধ করেছি এবং তার জন্য আমি সাজাও পেয়েছি। এটি আমার জীবনের চরম এক ট্র্যাজেডি। আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময় ছিল এটা। আমি নির্ধারণ  করেছিলাম ভালো কাজ করেই কারাগারে সময় কাটাবো। আমি এখনও বিশ্বাস করি আমি বর্ণবাদের শিকার। আমি কালো হওয়াতেও বিচারের রায় আমার বিরুদ্ধে গিয়েছে। কারাগারে অনেক সরকারী কর্মকর্তা আমার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। কেউ আমাকে বানর বলেও ডেকেছে, আমি অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাই নাই। হোম অফিস অন্য কারো সাথে আমাকে মিলিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং ভুলভাবে আমাকে জ্যামাইকায় ফেরত পাঠিয়েছিল, একজন সাদা চামড়ার লোক হলে এই ঘটনা আদৌ ঘটতো না।”
ওয়ালেস জ্যামাইকাতে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছিলেন। তিনি জ্যামাইকার একটি দোকানে খাবার রান্না করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জ্যামাইকায় বেশিরভাগ সময় দোকানের মেঝেতে তাকে ঘুমাতে হয়েছিল বলে জানা যায়।
বৃটিশ গণমাধ্যমকে ওয়ালেস জানান, বর্তমানে  যুক্তরাজ্যে তার জীবন পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি উত্তর আফ্রিকা এবং ক্যারিবিয়ান খাবারের একটি ক্যাটারিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, বসবাস করছেন দক্ষিণ লন্ডনে। তাছাড়া তিনি দক্ষিণ লন্ডনে ছুরি অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা তরুণদেরও পরামর্শদাতা।
হোম অফিস ওয়ালেসকে ২০২১ সালে একটি নতুন ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেয়। ২০১৮ সালে ওয়ালেসের পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়ার পর আবেদন করলে হোম অফিস নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করে।
মিডিয়ায় হোম অফিস এই গোটা বিষয়ের উপর মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে।
হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা কখনই  আলাদাভাবে কোন একক মামলা নিয়ে মন্তব্য করি না।”

আরো পড়ুন

সরকারের অনুদান যেভাবে দেওয়া হবে

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ২০৫ বিদেশি শ্রমিক আটক

ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় ইইউ