TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

‘গ্যাং সংস্কৃতি’ থেকে রক্ষা পেতে ঘানায় পাঠানো ব্রিটিশ কিশোর আপাতত ফিরতে পারবে নাঃ হাই কোর্টের রায়

লন্ডনের হাই কোর্টের এক বিচারক রায় দিয়েছেন, ইংল্যান্ডে ‘গ্যাং সংস্কৃতির’ প্রভাবে বিপদে পড়া আশঙ্কায় বাবা-মা যাকে ঘানায় পাঠিয়েছেন, সেই কিশোর আপাতত সেখানে থেকেই তার জিসিএসই পরীক্ষা শেষ করবে। ছেলেটির আদালতে দেশে ফেরার আবেদন আপাতত খারিজ করা হয়েছে।

ছেলেটি, যাকে আইনগত কারণে ‘এস’ নামে শনাক্ত করা হয়েছে, আদালতের কাছে আবেদন করেছিল যেন তার বাবা-মাকে নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তার বাবা-মা আদালতে জানান, তারা চান না ছেলে এখনই ফিরে আসুক, কারণ ইংল্যান্ডে থাকলে তাকে নিরাপদ রাখা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন।

বিচারপ্রক্রিয়ায় জানা যায়, ছেলেটির বাবা-মা ঘানায় জন্মালেও সে ইংল্যান্ডে জন্মেছে এবং নিজেকে আফ্রিকার সেই দেশে “বহিরাগত” মনে করে। বিচারক মিসেস জাস্টিস থেইস রায়ে বলেন, ছেলেটিকে প্রতারণা করে ঘানায় রেখে আসা হয়েছিল, তবে বর্তমানে তার নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানেই থাকা উচিত। তিনি নির্দেশ দেন, জিসিএসই পরীক্ষার পর ইংল্যান্ডে ফেরার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

২০২৪ সালের মার্চ মাসে ছেলেটি বাবা-মা ও এক ভাইবোনের সঙ্গে ঘানায় আত্মীয়দের দেখতে যায়। এপ্রিল মাসে পরিবারের বাকিরা ইংল্যান্ডে ফিরে আসে, কিন্তু তাকে সেখানেই রেখে যায়। বাবা-মা জানান, গত এক বছরে ছেলেটির আচরণ নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন—তাদের আশঙ্কা ছিল, সে এলাকার গ্যাং সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছে।

বাবা-মা আদালতে জানান, ছেলেটির ফোনে এমন ভিডিও, ছবি ও বার্তা পাওয়া গেছে যা তাকে চুরি, জালিয়াতি ও ছুরি বহনের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ তৈরি করে। এমনকি তার মা বাড়িতে রান্নাঘরের ছুরি লুকানো অবস্থায়ও পেয়েছিলেন।

বিচারক বলেন, যদি এখনই ছেলেটি ইংল্যান্ডে ফিরে আসে, তবে পারিবারিক সম্পর্কে ভাঙন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে এবং সে আবারও সেই একই বিপদের মুখে পড়তে পারে, যেগুলো থেকে তাকে রক্ষা করতে বাবা-মা এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

ছেলেটির মা এখনো মনে করেন, সে ইংল্যান্ডে ফিরে এলে শারীরিক ক্ষতি বা মৃত্যুর ঝুঁকি থাকবে। তার আইনজীবী আদালতে জানান, মা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একান্তই ছেলের নিরাপত্তার কথা ভেবে।

বিচারক থেইস রায়ে আরও বলেন, যদিও ঘানায় থেকে যাওয়ায় ছেলেটির মনে “পরিত্যক্ত হওয়ার” অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে, তবে সে এখন বুঝতে পারছে কেন তার বাবা-মা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিচারকের মতে, ছেলেটির মেধা ও বুদ্ধিমত্তা আছে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো, এবং পরিবারটিরও যৌথ লক্ষ্য—সে যেন ভবিষ্যতে নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারে।

ঘানায় গিয়ে ছেলেকে দেখতে যাওয়া তার বাবা এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি [এস]-কে খুব ভালোবাসি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি না, ইংল্যান্ডে থাকলে আমি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব। এটা ভালোবাসার অভাব নয়, বরং বাস্তব পরিস্থিতির মূল্যায়ন। এখন ঘানাই তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

কাতার বিশ্বকাপে মরুভূমির উত্তাপে স্টেডিয়াম শীতল হবে যেভাবে

ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে জি সেভেন:ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

গবেষকদের আশা ক্যান্সার চিকিৎসায় বিপ্লব আনতে পারে “তরল বায়োপসি”