TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

‘দেশ ছাড়েনি তবু ভাতা বন্ধ’: যুক্তরাজ্যে সরকারের অ্যান্টি–ফ্রড সিস্টেমে মারাত্মক ভুল

উত্তর আয়ারল্যান্ডের শত শত অভিভাবক হঠাৎই শিশুভাতা (Child Benefit) বন্ধ হওয়ার চিঠি পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারণ, যুক্তরাজ্যের নতুন প্রতারণা দমন ব্যবস্থা (Anti-Fraud System) ভুলভাবে ধরে নিয়েছে—তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ীভাবে চলে গেছেন। অথচ বাস্তবে অনেকেই কেবল ছুটি কাটিয়ে ডাবলিন বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফিরেছেন।

তদন্তে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৩৪৬টি পরিবার এই ভুলের শিকার হয়েছেন। অনলাইন সংবাদমাধ্যম The Detail এবং দ্য গার্ডিয়ান–এর যৌথ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্য সরকার সম্প্রতি একটি নতুন নজরদারি পদ্ধতি চালু করেছে যা নাগরিকদের বিদেশ যাওয়া ও ফেরার তথ্য ট্র্যাক করে।

যদি কেউ দেশ ত্যাগ করে আট সপ্তাহের মধ্যে ফেরার কোনো রেকর্ড না থাকে, তবে HMRC (Her Majesty’s Revenue and Customs) স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাতা স্থগিত করে দেয়।

সমস্যার মূল কারণ হলো—উত্তর আয়ারল্যান্ডের অনেক মানুষ সাধারণত বেলফাস্ট থেকে বিদেশে যান, কিন্তু ফিরে আসেন ডাবলিন হয়ে, কারণ এতে ভ্রমণ খরচ কম ও ফ্লাইটের সংখ্যা বেশি। কিন্তু HMRC–এর সিস্টেমে দেখা যায় তারা যুক্তরাজ্য থেকে গেছেন, কিন্তু ফেরেননি—কারণ আইরিশ সীমান্তে কোনো পাসপোর্ট চেক নেই।
ফলে ওইসব যাত্রীদের তথ্য ডেটাবেসে ‘দেশ ত্যাগ করেছে কিন্তু ফেরেনি’ হিসেবে রেকর্ড হয়, এবং তাদের শিশুভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

বেলফাস্টের এনএইচএস নার্স মার্ক টোয়াল ও তার স্ত্রী লুইস এমনই এক পরিবারের সদস্য। তাঁরা ২০২২ সালে দুই সন্তান নিয়ে ইংল্যান্ডে ঘুরতে গিয়েছিলেন এবং ফিরেছিলেন ডাবলিন হয়ে। কিন্তু তিন বছর পর HMRC থেকে এক চিঠিতে জানানো হয়, তাদের শিশুভাতা বন্ধ করা হয়েছে কারণ তারা নাকি দেশ ছেড়েছেন।
টোয়াল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমি একই ঠিকানায় ২৩ বছর ধরে আছি, কর দিচ্ছি ৩০ বছর ধরে। এখন কি প্রতিবার ডাবলিন হয়ে ফিরলেই আবার প্রমাণ দিতে হবে যে আমি দেশ ছাড়িনি?”

তিনি আরও জানান, HMRC তাকে ৭০টি প্রশ্ন পাঠায়—এর মধ্যে তিন বছর আগের বোর্ডিং পাস, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, স্কুল ও হাসপাতালের নথিও চাওয়া হয়।

আরেক নারী (ছদ্মনাম মারিয়া) বলেন, তিনি ইতালি সফর শেষে মে মাসে ডাবলিন হয়ে দেশে ফেরেন, কিন্তু অক্টোবরেই ভাতা বন্ধের চিঠি পান। আপত্তি জানালে তাকেও বলা হয়—বাসস্থান, সন্তান, চিকিৎসা ও স্কুল সংক্রান্ত নানা প্রমাণ জমা দিতে হবে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পুরো প্রক্রিয়াটা যেন একেবারে কাফকার গল্পের মতো—অযৌক্তিক, জটিল আর ক্লান্তিকর।”

উত্তর আয়ারল্যান্ডের সিন ফেইন দলের এমপি ডেয়ার হিউজেস বলেন, “এই নীতির নকশায় উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাস্তবতা একেবারেই বোঝা হয়নি। পরিবারগুলো ভয়ংকর মানসিক চাপের মধ্যে পড়েছে।”
তিনি এই ব্যবস্থা ‘not fit for purpose’ বলে অভিহিত করেন।

এদিকে এসডিএলপি দলের এমপি ক্লেয়ার হান্না জানান, তিনি নিজেও একাধিকবার ওয়েস্টমিনস্টার থেকে ভোট শেষে ডাবলিন হয়ে ফিরেছেন, কারণ রাতে বেলফাস্টে কোনো ফ্লাইট থাকে না।
তিনি বলেন, “HMRC কোথা থেকে তথ্য নিচ্ছে এবং কীভাবে তা প্রতারণার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করছে—এ বিষয়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে।”

HMRC স্বীকার করেছে, “উত্তর আয়ারল্যান্ডের অল্প কিছু গ্রাহকের শিশুভাতা ভুলবশত স্থগিত করা হয়েছিল।” সংস্থাটি জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ১৩৪ জনের ভাতা পুনরায় চালু করা হয়েছে, আরও ৪৬ জনের ক্ষেত্রে তদন্ত চলাকালে অর্থ পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে এখনও ১৬৬টি পরিবারের ভাতা স্থগিত রয়েছে এবং অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী

যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী তরী তীরে ভিড়াতে পারবে কি কনজারভেটিভ দল

যুক্তরাজ্যের বাজারে খুব দ্রুতই আসতে যাচ্ছে ল্যাবে তৈরি মাংস