ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা অভিবাসীদের তালিকায় আলবেনিয়ানরা ছিলেন আফগানদের ঠিক পরেই। এখন অবশ্য আলবেনিয়াকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন ভারতীয় অভিবাসীরা৷ চ্যানেল পাড়ি দেয়াদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছেন তারা বলে এক প্রতিবেদনে জানা যায়।
যুক্তরাজ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করা ভারতীয়দের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসে তিন হাজার ৭৯৩ জন অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৭৫ জন ছিলেন ভারতীয়।
২০২২ সালে পুরো বছর জুড়ে ইংলিশ চ্যালেন পাড়ি দেয়া ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮৩ জন।
নানা প্রতিবেদনে ভারতীয়দের সংখ্যা বাড়ার পেছনে সার্বিয়ায় তাদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগকে তুলে ধরা হয়েছে। সার্বিয়ায় এসে বলকান রুট ধরে ইউরোপের নানা দেশে আসেন তারা। তাদের অনেকে পরবর্তীতে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার জন্য ফ্রান্স থেকে ছোট নৌকায় চড়েন।
এ বছরের শুরু পর্যন্ত ভিসা ছাড়াই ৩০ দিনের জন্য সার্বিয়ায় প্রবেশ করতে পারতেন ভারতীয় নাগরিকেরা। পরবর্তীতে ইউরোপের অন্য দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে ভিসা নীতিতে পরিবর্তন এনে এই সুযোগ বাতিল করে সার্বিয়া।
এদিকে, নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দেয়ার জন্য অভিবাসীদের খরচও কমে এসেছে বলে জানানো হয়েছে নানা প্রতিবেদনে। এখন পাচারকারীরা অভিবাসীদের কাছ থেকে মাথাপিছু সাড়ে তিন হাজার পাউন্ড নেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরো কম।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে যুক্তরাজ্যের এক অভিবাসন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, ‘‘ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দেয়া যুক্তরাজ্যে প্রবেশে একটি প্রতিষ্ঠিত রুটে পরিণত হয়েছে। ট্রাকে চড়ে যাওয়ার চেয়ে এর খরচও কম। ফলে শরণার্থীরা আসে, এমন সব স্বীকৃত দেশের বাইরে অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে পারে৷’’
চলতি বছর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অন্তত ৫৬ হাজার আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে আসতে পারেন৷ ২০২২ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি৷ আদালতে উপস্থাপন করা যুক্তরাজ্য সরকারের এক নথিতে এমন আভাস দেয়া হয়েছে৷
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫৬ হাজার অভিবাসী পৌঁছালে, এক লাখ ৪০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর বাসস্থানের প্রয়োজন হবে যুক্তরাজ্যে৷
২০২২ সালে ছোট নৌকা নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটির দক্ষিণ উপকূলে আসেন ৪৫ হাজার অভিবাসী৷ যা তার আগের দুই বছরের তুলনায় অন্তত দশ গুণ বেশি৷
চলতি বছর, চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীর সংখ্যা এরই মধ্যে ছাড়িয়েছে পাঁচ হাজার৷
লন্ডন হাইকোর্টে এপ্রিলে একটি মামলার অংশ হিসাবে সরকারের পক্ষ থেকে একটি অভিবাসন বিষয়ক নথি দাখিল করা হয়৷ এতে বলা হয়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক লাখ নয় হাজারেরও বেশি আশ্রয়প্রার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাজ্য৷ এদের মধ্যে ৪৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে রাখা হয়েছে হোটেলে৷ আবাসনের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিদিন ৬২ লাখ পাউন্ড খরচ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় নথিতে৷
২০২২ সালে বলকান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয়টি দেশে তিন লাখের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী পা রেখেছেন৷ তাদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষে আছেন বাংলাদেশিরা৷ ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে৷
গ্রিস, ইটালি, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্ৎসেগোভিনা ও মন্টেনেগ্রো–এই ছয়টি দেশে গত বছর তিন লাখ ২১ হাজার নতুন অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছান৷ ২০২১ সালের তুলনায় যা ৮৬ শতাংশ বা প্রায় দ্বিগুণ বেশি৷ আগতদের বেশিরভাগ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক৷
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে৷ সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে যত অভিবাসনপ্রত্যাশী এই দেশগুলোতে এসেছেন বছরের শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকেই সেখানে ছিলেন না৷ ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ইটালিতে সমুদ্রপথে এক লাখ পাঁচ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী পৌঁছান৷ তাদের মধ্যে অভিভাবকের সঙ্গে ছয় হাজার ১৫১ শিশু এবং অভিভাবকহীন ছিল ১২ হাজার ৬৮৭ শিশু। তারা মূলত মিশর, টিউনিসিয়া, বাংলাদেশ, সিরিয়া আফগানিস্তানের বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷