বাঙালির জন্য পহেলা বৈশাখ মানেই হলো লাল পাড়ের সাদা শাড়ির সঙ্গে ছেলেদের পাঞ্জাবি, আর বৈশাখি মেলা তো আছেই। তবে একটি জিনিস যেন না হলেই নয়, তা হলো বাঙালির ঐতিহ্য পান্তা-ইলিশ।
বাংলা নববর্ষে পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রচলন আগে একেবারেই ছিল না। এর সঙ্গে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির কোনো সংযোগও নেই। বাংলা নববর্ষ সৌরপঞ্জিকা অনুসারে প্রবর্তিত হয়। এই এলাকায় পান্তা ভাত সব সময়ই কৃষকের কাছে পরিচিত খাবার। এর সঙ্গে বিভিন্ন শাকসবজি ও শুঁটকি ভর্তা ছিল খাবারের তালিকায়। কিছু এলাকায় কচুশাকের ডাঁটা মিশিয়ে রূপচাঁদা মাছের শুঁটকির প্রচলন বেশি ছিল বলে জানা গেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলা নববর্ষ উৎসবের দুটি দিক আছে। প্রথমটি আবহমান বাংলায় ধারাবাহিকভাবে চলে আসা সামাজিক রীতি। অন্যটি ৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক আন্দোলন। রমনা পার্ককে ঘিরে শুরু হলেও বর্তমানে যার বিকশিত রূপ সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্বে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।
যতটুকু জানা যায়, ৮০-এর দশকে রমনাকে কেন্দ্র করে নববর্ষে কিছু খাবারের দোকান বসে। যারা ছায়ানটের অনুষ্ঠান দেখতে যেতেন তারা সেখানে খেয়ে নিতেন। এমনই একবার অল্প কয়েকজন মিলে পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা বিক্রি করলেন এবং তা সব বিক্রি হয়ে গেল। কয়েকজন বেকার তরুণ এই কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদের উৎসাহিত করতে এবং নতুন একটা কিছু প্রবর্তন করার মানসিকতা নিয়ে একটি গ্রুপের প্রচারণা চালাতে লাগলেন। যাদের মধ্যে দু-একজন গণমাধ্যমকর্মীও ছিলেন। বিষয়টা আর কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। মুনাফালোভী গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে বৈশাখের অনেক কিছুই করপোরেটদের দখলে চলে যায়।
প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে পান্তা-ইলিশ বাঙালি খুব ঘটা করে খেলেও, অনেকে এর সমালোচনাও করে থাকেন। সমালোচকদের মতে, শহরে পান্তা ভাত খাওয়া আমাদের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ব্যঙ্গ করা। এটি শুরু হয়েছিল টাকা কামানোর ধান্দায়, সংস্কৃতি-প্রেমের জন্য নয়।
এম.কে
১৪ এপ্রিল ২০২৪