TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনগুলোর বিরুদ্ধে পরিষেবা চার্জ বৃদ্ধির অভিযোগ

যুক্তরাজ্যের হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা তথাকথিত “সাশ্রয়ী” বাড়ি বিক্রি করেছে, যেখানে পরিষেবা চার্জ আবাসীদের প্রবেশের পর অত্যধিক বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪০০% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে পরিষেবা চার্জ।

অবজারভার পত্রিকার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আর্থিকভাবে দুর্বল ক্রেতাদের ১২০ পাউন্ড মাসিক চার্জের মতো কম খরচের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌথ মালিকানার বাড়ি কিনতে উৎসাহিত করা হয়। তবে বাস্তবে, অনেক ক্ষেত্রে এই চার্জ বেড়ে ৬৫০ পাউন্ডেরও বেশি হয়েছে।

যৌথ মালিকানার আওতায়, ক্রেতারা একটি লিজহোল্ড সম্পত্তির একটি অংশ কিনতে পারেন, যেখানে তাদের আর্থিক যোগ্যতা যাচাই করা হয়।

প্যাট্রিক ডাফি, যিনি একটি আর্ট গ্যালারিতে কাজ করেন, তিনি ২০১৭ সালে পূর্ব লন্ডনের ডালস্টনে তার যৌথ মালিকানার ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তখন মাসিক পরিষেবা চার্জ ছিল মাত্র ৯৫ পাউন্ড। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চার্জ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ৭০৬ পাউন্ড হবে।

তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য খরচ, এবং হয়তো আজীবন আমাকে এই ফ্ল্যাটেই থাকতে হবে, কারণ এটি বাজারে বিক্রি করা যাচ্ছে না।”

অন্যদিকে, ব্রাইটনের ক্লারিয়ন হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের একটি উন্নয়ন প্রকল্পে জর্জ অ্যান্ডেইনের পরিষেবা চার্জ ২০২১ সালে ১২০ পাউন্ড থেকে ২০২৪-২৫ সালে ৩৯০ পাউন্ডে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, “এটি মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা এই চার্জের ফাঁদে আটকে গেছি, বের হতে পারছি না এবং ঋণের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক ব্রিজেট কটার, যিনি ২০২২ সালে একই প্রকল্পের একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তার মাসিক চার্জ ১৪৫ পাউন্ড থেকে ২০২৩-২৪ সালে ৩৭২ পাউন্ড হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত। আমি জানি না কী করব। আমি এই খরচ বহন করতে পারছি না, কিন্তু ছেড়েও যেতে পারছি না।”

আবাসন সংস্থাগুলো অভিযোগের মুখে পড়েছে, তারা বিক্রির সময় সঠিক পরিষেবা চার্জ উল্লেখ করেনি। যেমন, দক্ষিণ লন্ডনের বারমন্ডসির পিকল ফ্যাক্টরিতে পিবডি হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনের একটি যৌথ মালিকানার ফ্ল্যাট ২৪৭ পাউন্ড মাসিক পরিষেবা চার্জ হিসেবে বিজ্ঞাপিত হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত চার্জ ২০২৪ সালে ৪০৬ পাউন্ড হবে—যা প্রায় ৬০% বেশি বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।

সরকার সম্প্রতি একটি হোয়াইট পেপার প্রকাশ করেছে, যেখানে নতুন লিজহোল্ড ফ্ল্যাট বিক্রি নিষিদ্ধ করার এবং কমনহোল্ড নামে নতুন মালিকানা ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বিদ্যমান লিজহোল্ড সম্পত্তিগুলো কীভাবে পরিবর্তন করা হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

হাউজিং অ্যাসোসিয়েশনগুলো বলছে, তারা পরিষেবা চার্জ থেকে কোনো মুনাফা করে না এবং এই চার্জ সাধারণত বাইরের ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।

ন্যাশনাল হাউজিং ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী কেট হেন্ডারসন বলেন, “বাড়ির বীমার খরচসহ বিভিন্ন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিষেবা চার্জ বাড়ছে।”

ক্লারিয়ন হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, তারা ব্রাইটনের প্রকল্পের ম্যানেজিং এজেন্টের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে এবং খরচ বৃদ্ধির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

পিবডি হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তারা তাদের ফ্ল্যাটের বিজ্ঞাপন পুনরায় পর্যালোচনা করবে, যাতে এটি সঠিক তথ্য প্রকাশ করে।

এদিকে, সরকারের আবাসন মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, “সরকার লিজহোল্ড ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভুক্তভোগী লিজহোল্ডারদের জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়া হবে।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
০৯ মার্চ ২০২৫

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী গ্রেপ্তার

লন্ডনে পুলিশের ছদ্মবেশে চুরি করতেন এই সিরিয়াল চোর

অনলাইন ডেস্ক

আয়ারল্যান্ড সকল অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠাবে ইউকেতে