পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের অভাবে বড় বিপদে পড়েছে যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট পরবর্তী খাদ্য সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে জ্বালানি সরবরাহ সমস্যা। এদিকে লরি চালকদের জন্য লোভনীয় আয়ের সুযোগ দেওয়া হলেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। অভাব পূরণে সামরিক কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বিদেশ থেকে কর্মী আনারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থির প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের একজন লরি চালক জানালেন, ‘কেন এই দেশে কেউ ট্রাক বা লরি চালাতে চান না।’
৩০ বছর বয়সী প্রাক্তন ট্রাক (এইচজিভি) ড্রাইভার জিম টিথেরিজের একটি ফেসবুক স্টেটাস সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। তিনি এতে ব্যাখ্যা করেন –কেন তার মতোই আরও অনেক ড্রাইভার তাদের পেশায় ফেরত আসতে চান না, যে পেশাটি একসময় তাদের খুব পছন্দের ছিল। তিনি বলেন, ইউরোপের তুলনায় যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়েছে। ফ্রান্সে এই পেশাটিকে প্রশংসা করা হলেও যুক্তরাজ্যের ড্রাইভারদের অপমান হতে হয়।
তিনি বলেন, একসময় আমাদেরকে সড়কের নাইট হিসেবে দেখা হতো। এখন আমাদেরকে সমাজের কুষ্ঠরোগী হিসেবে দেখা হয়!
একসময় বড় হয়ে লরি চালক হওয়ার স্বপ্ন দেখা জিমের দ্রুতই স্বপ্নভঙ্গ হয় যখন তিনি দেখেন তার পেশাকে চরম অবজ্ঞা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ট্রাক পার্কিং এবং ট্রান্সপোর্ট ক্যাফেগুলো কমে যাওয়া ছিল আমাদের প্রথম সমস্যা। এরপর গাড়ি থামানোর স্থানগুলোতে রেস্ট্রিকশন বাড়ানোয় ঝামেলা বেড়ে যায়। প্রায় প্রতিটি শহরের জন্যে আবার আলাদা ওয়েট লিমিট (ওজন সীমাবদ্ধতা) আছে।
আপনি ডেলিভারি করার জন্য যেখানে যেতে পারবেন সেখানে আবার থাকতে পারবেন না। কেউ খালি ট্রাক চায় না। তারা যেটা চায় সেটা পেয়ে গেলে সেখানে আর আপনার মূল্য নেই।
চালকদের মতে, এই পেশায় তাকে অতিরিক্ত পয়সা খরচ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আপনাদের জন্য আমি আমার ঘর এবং পরিবার থেকে দূরে রাত কাটিয়েছি। অন্তত মৌলিক পরিষেবাগুলো কি আমি চাইতে পারি না?
যুক্তরাজ্যের ড্রাইভারদের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বিশেষ করে ইউরোপের ড্রাইভারদের তুলনা করেন জিম। তিনি জানান, ফ্রান্সের লরি চালকরা প্রায় প্রতিটি শহর বা গ্রামে পার্ক করতে পারেন। সেখানে আলাদা ‘পার্কিং বে’ আছে, চালকরা খাও্যা ও গোসলের সুযোগ পান। ট্রাক সারা রাত রেখে দেওয়ার জন্য কোনো কৈফিয়ত দিতে হয় না। স্থানীয়রাও সম্মান করেন।
সেখানকার মোটরওয়ে সার্ভিসে ট্রাক চালকদের জন্য বিনামূল্যে পার্কিং ব্যবস্থা থাকে। ড্রাইভাররা কেনাকাটায় ২০ শতাংশ ছাড় পান। এমনকি ড্রাইভারদের চাড়া থাকে বিধায় লাইনে দাঁড়াতে হয় না।
এদিকে যুক্তরাজ্যে ওভার নাইট পার্কিংয়ের জন্য গুনতে হয় ২৫ থেকে ৪০ পাউন্ড। এছাড়াও ড্রাইভারদের গোসলের জন্য দেও্যা হয় নোংরা পানি, আর খাবারের দাম অনেক বেশি। তিনি বলেন, আমরা শহর থেকে বিতারিত হওয়ার পাশাপাশি বেতন কেটে নেওয়ার শিকার হচ্ছি।
যাইহোক, সরকার এই সংকটের সময় আবার বিদেশি চালকদের দিকে ফিরেছে। সম্প্রতি বিদেশি চালকদের জন্য অস্থায়ী ভিসার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
৯ অক্টোবর ২০২১
এনএইচ