বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেটের কুলাউড়া নুনছড়া খাসিয়াপুঞ্জির পানের জুম দখলে নিতে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। হামলায় খাসিয়া সম্প্রদায়েরর অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৪ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর নুনছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ববরিন খাসিয়া ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা হচ্ছে, কর্মধা ইউপির নলডরি গ্রামের লিটন মিয়া, পূর্ব ফটিগুলি গ্রামের এলাইছ মিয়া, ফজলু মিয়া, নলডরি গ্রামের দুলন মিয়া, জাভেদ মিয়া, ফটিগুলি গ্রামের ফরজান আলী, নলডরি গ্রামের রাশিদ মিয়া, আসগরাবাদ গ্রামের পিলু মিয়া, পূর্ব ফটিগুলি গ্রামের অকিল, মনসুর মিয়া, রেনু মিয়াসহ ১৫-১৬ জন।
মামলার এজাহারে নুনছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান ববরিন খাসিয়া জানিয়েছেন, তিনি একজন পানচাষী। নিজ বাগানেই পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু স্থানীয় বন বিভাগের জমির দোহাই দিয়ে স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী পানপুঞ্জি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। প্রায় সময় রাতের আধারে ওই চক্র পান গাছ কেটে নিয়ে যায়। এদিকে, জমির মালিকানা নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেওয়ায় খাসিয়াদের পক্ষ থেকে জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে সত্ব মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় প্রথম রায় খাসিয়াদের পক্ষে আসার পর বন বিভাগের পক্ষ থেকে আপিল করলে সেই রায়ও খাসিয়াদের পক্ষে আসে।
এদিকে,২০ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে স্থানীয় লিটন মিয়া, এলাইছ মিয়া, ফজলু মিয়াসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থায় নুনছড়া পুঞ্জিতে হামলা চালানো হয়। এ সময় তারা অবাধে গাছ কাটা ও পান জুমের ক্ষতি করে। এক পর্যায়ে সংখ্যালঘু খাসিয়া সম্প্রাদায়ের লোকজন নিজেদের জমি ও পানজুম রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা দা, রামদা, লোহার রড দিয়ে খাসিয়াদের মারধর শুরু করে। দলবেঁধে তারা মারধর করলে দা, রামদা ও লোহার রডের আঘাতের গুরুতর আহত হন পুঞ্জির রবেট মারচিয়াং, পালাং, রিশন বারেক, শাহিন আহমদসহ কয়েকজন। হামলার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের প্রথমে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরবর্তীতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
হামলার ঘটনায় রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) হেডম্যান ববরিন খাসিয়া বাদি হয়ে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ (২২ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
হেডম্যান ববরিন খাসিয়া জানান, হামলার ঘটনার পর থেকে সন্ত্রাসীরা তাদের বাগানে ঢুকতে দিচ্ছে না। এতে করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার পান পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এখনো সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
এমকেসি/এনএইচ