গত সপ্তাহ জুড়ে হোম অফিস বর্ডার ফোর্সের রেইডে অভিবাসন আইন অমান্য করে কাজ করায় প্রায় ৬০ জন ফাস্টফুড ডেলিভারি রাইডারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডেলিভারু, জাস্ট ইট এবং উবারইটসে কাজ করে এমন ডেলিভারি ড্রাইভারদের ১৬ থেকে ২২ এপ্রিলের অভিযানে গ্রেফতার করা হয়।
হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন টার্গেট করে এই রেইড পরিচালনা করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, তাদের অপরাধের মধ্যে রয়েছে মিথ্যা ডকুমেন্টেশন দাখিল করা এবং যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে কাজ করা। তাদের সাথে থাকা অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়, ধারনা করা হচ্ছে তারা আরো অন্য কোনো অপরাধের সাথেও যুক্ত থাকতে পারে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪৪ জনকে ইউকে হতে ডিপোর্টেশন করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানা যায় এবং বাকি ১৬ জনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে বলে হোম অফিস জানায়।
হোম অফিস জানিয়েছে, ” তারা আশা করে এইভাবে ক্র্যাক ডাউন চালালে অবৈধভাবে যারা ইউকেতে অবস্থান করছে তারা হয়ত স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করবে।”
হোম অফিস দাবি করেছে লন্ডনে নির্দিষ্ট সময়ে একটি কাজে নিয়োজিত থেকে অর্থ দ্রুত আয় করার একটা ধারা সৃষ্টি হওয়ায় অভিবাসন অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হোম অফিসের মুখপাত্র আরো জানান, দীর্ঘদিন হতে এই ডেলিভারি ড্রাইভারদের টার্গেট করে তথ্য যোগাড় করেন ইমিগ্রেশন অফিসাররা। তারপর অভিযান পরিচালনা করা হয়।
স্বরাষ্ট্রসচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান দাবি করেন,
“অবৈধভাবে আসা লোকেরা এইদেশে বৈধ উপায়ে আয় রোজগার করছে না তাতে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইউকেতে থাকা স্থায়ী বাসিন্দারা কাজ পাচ্ছেন না। যা আমাদের সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং স্থানীয় লোকেরা কাজের অভাববোধ করছে। অনেকে কাজ পাচ্ছে না। ক্যাশ ইন হ্যান্ড কাজ করার সুবিধা নিয়ে সস্তায় অবৈধ ইমিগ্র্যান্টরা কাজ করে যাচ্ছে। আমরা এটা বরদাস্ত করবো না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী চান আইন মেনে এইধরনের অপব্যবহার যাতে দ্রুত রোধ করা যায়।”
অ্যাপ ড্রাইভার এবং কুরিয়ার্স ইউনিয়ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানায়, ” এইভাবে রাস্তা আটকে পুলিশ কর্তৃক অভিবাসন চেক করা কখনও উচিত নয়। এমনিতেই কর্মী সংকট রয়েছে এরপর এইভাবে আচরণ করলে মানুষ আর ডেলিভারি ড্রাইভার হিসেবেই কাজ করতে রাজি হবে না। এমনিতেই শ্রমিকেরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ডেলিভারি নিয়ে গেলে অনেক সময় টাকা পাচ্ছে না উলটো আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তাই পুলিশের এইসব আচরণ বন্ধ করা উচিত। তা নাহলে আস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে পুলিশের উপর থেকে।
হোম অফিস জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা ছিলেন ব্রাজিলিয়ান, ভারতীয় এবং আলজেরিয়ান নাগরিক।তাদের নিকট হতে প্রায় সাড়ে চার হাজার পাউন্ড পরিমান নগদ অর্থ জব্দ করা হয়।
হোম অফিস নিশ্চিত করে , যুক্তরাজ্যের সমস্ত নিয়োগকারীদের কাজে যোগ দেওয়ানোর আগে বৈধ কাগজপত্র চেক করার নিয়ম রয়েছে। দায়িত্ব অবহেলার কারণে নিয়োগকর্তাদের পাঁচ বছরের জেল এবং জরিমানা হবার বিধানও রয়েছে। প্রতি অবৈধ নিয়োগকারীর জন্য সর্বোচ্চ বিশ হাজার পাউন্ড জরিমানার বিধান রেখেই আইন করা হয়েছে। তাছাড়া অবৈধ লোকেদের কাজে নিয়োগ দেয়ার অপরাধে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে সর্বোচ্চ ৫১ সপ্তাহ এবং স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে।
ডেলিভারু, উবারইটস ও জাস্ট ইটের কর্মকর্তারা জানান, আমরা বৈধ মানুষদের কাজে নিয়োগ দিয়ে থাকি এবং আমরা হোম অফিস ও পুলিশের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে চাই। অবৈধভাবে আসা লোকেদের কাজে না নেওয়ার সাথে আমরাও একমত। আমাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হলে অবশ্যই কাজ করার বৈধ অনুমতি থাকতে হয়। নিয়ম ভঙ্গ করে কোনো ধরনের কাজ করার পক্ষপাতী আমরা নই।
উবারেটসের মুখপাত্র বলেন, “ আমাদের প্ল্যাটফর্মে অবৈধ লোকেদের কাজের জন্য কোনও জায়গা নেই এবং আমরা এই অভিযোগগুলি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আমলে নেই। কেউ যদি যথাযথ কাগজ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার একাউন্ট জব্দ হয়ে যায়। আমরা আইনের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছি।
একজন ডেলিভারি ড্রাইভার জানান, ২০২১ সালের মে মাসে পুলিশ এবং ইমিগ্রেশন অফিসাররা দ্বারা টুটিংয়ে আক্রমণের শিকার হোন তিনি। সেদিন ৯০ মিনিটে প্রায় ৪৮ টি বাইক আটকানো হয়। এদের মাঝে দুইজনকে বীমা নেই বলে ফাইন করা হয়। তিনজনকে অপরাধের জন্য রিপোর্ট করা হয়েছিল এবং দু’জনকে অভিবাসন অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।
রাইডার কার্লোস পেরেরিয়া যিনি দ্বৈত পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশ নাগরিক, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানান , “আমি মনে করি আমারা পুলিশ কর্তৃক হামলার শিকার হচ্ছি। কোভিডের সময় আমাদের নায়ক বলে সম্ভোধন করা হতো আর এখন আমাদের প্রতিনিয়ত পুলিশ কর্তৃক হামলার শিকার হতে হচ্ছে।
টুটিংয়ের সাংসদ ডাঃ রোজেনা অ্যালিন-খান জানান পুলিশের এইরকম ব্যবহার রেইসিজমের মতো দেখাচ্ছে। এটা উচিত নয়। পুলিশের মূল্যবান কাজ ও সময় দুটোই বুঝেশুনে ব্যবহার করা উচিত। হোম অফিস কাউকে অযথা হয়রানি করতে পুলিশ ব্যবহার করা যেনো বন্ধ করে।