5.9 C
London
November 22, 2024
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

একজন আশ্রয়প্রার্থীর বিশ্বজয়ের গল্প

নিজের স্বপ্নপূরণের পথে হাল ছাড়া যাবে না কখনও’-এই দর্শন নিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়েছেন রামলা আলি। ছিল নানা প্রতিবন্ধকতা৷ কিন্তু সব বাধা ডিঙিয়ে যুক্তরাজ্যের বক্সিং জগতে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন সোমালিয়ার এই তরুণী৷

১৯৮৯ সালের কথা৷ সোমালিয়ার রাজধানীতে জন্ম রামলা আলির। তখন সোমালিয়ার অবস্থা টালমাটাল৷ দশকের পর দশক ধরে দেশটিতে চলছিল জাতিগত সহিংসতা৷ তাই রামলাকে বড় হতে হয়েছে যুদ্ধ করেই৷

রামলা বয়স যখন তিন, তখনই বড় বিপদ আসে তার পরিবারে৷ সহিংস পরিস্থিতে একটি গোলার আঘাতে মারা যান তার বড় ভাই। বড় সন্তানকে হারিয়ে রামলার বাবা-মা ঠিক করলেন, এই দেশে আর থাকা যাবে না৷ ছাড়তে হবে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব৷

রামলা বলেন, “ভাই হারানোর বিষয়টি ছিল আমাদের জন্য নিদারুণ কষ্টের৷ কিন্তু আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে এই প্রতিজ্ঞাও ছিল।”

 

 

 

 

 

 

 

শেষ পর্যন্ত নৌকায় চেপে বাবা-মার সঙ্গে রামলা আলি আসেন সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ কেনিয়াতে৷ সেখানে পৌঁছাতে তাদের জলে ভাসতে হয়েছিল অন্তত ৯ দিন৷ তাদের চোখের সামনেই মারা গেছেন ওই নৌকায় থাকা কিছু যাত্রী৷

রামলা আলি বলেন, “আমরা সম্ভবত নরক জীবন পার করছিলাম৷ প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে যেকোনো খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের৷ আমরা প্রস্তুতও ছিলাম৷ জীবনটা বেশ কঠিন ছিল৷’’

সোমালিয়ার সংঘাত সহিংসতার কথা তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের সবকিছুই অধঃপতন হয়েছে। সার্বিক অবস্থা একেবারে নুয়ে পড়েছে। আমার মতো লাখো পরিবারের জীবন পরিবর্তনে বাধ্য করেছে।”

১৯৯৬ সালে কেনিয়া ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান রামলা এবং তার পরিবার৷ তখন তার বয়স সাত৷ সেখানে তারা শরণার্থীর মর্যাদা পান। যুক্তরাজ্যের একটি স্থিতিশীল পরিবেশ, রামলার পরিবারকে নতুন করে বাঁচার সাহস যোগায়৷ একটি উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন৷

বর্তমানে ৩৩ বছরের এই তরুণী বিশ্বজুড়ে বক্সিং রিংয়ের বাইরেও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

২০১৮ সালের গ্রীষ্মে বক্সার হিসাবে আয়োজক দেশ ইংল্যান্ডের হয়ে গ্লাভস হাতে লড়াই করেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়ে ধীরে ধীরে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেন রামলা৷ বয়ঃসন্ধিকালে কিছু সমস্যাও পোহাতে হয় তাকে৷

অতিরিক্ত ওজনের কারণে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন তিনি। তার দীর্ঘদিনের বন্ধু জেনা ম্যাকগুয়ার বলেন, “লোকেরা তাকে উপহাস এবং উত্যক্ত করেছিল। কিন্তু তার কাছে সবসময় শক্তি ছিল। তিনি শক্তি এবং আবেগ খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন। যা তাকে সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় যেতে সাহায্য করেছে।”

ওজন কমাতে গিয়ে তিনি ১৪ বছর বয়সে একটি স্থানীয় জিমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রামলা। সেখানে শরীর চর্চা করতে গিয়ে বক্সিং কোচের সঙ্গে পরিচয় হয় তার৷

 

 

 

 

 

 

 

সেই সব দিনের কথা মনে করে মুচকি হাসেন রামলা৷ বলেন, “আমি শৃঙ্খলার প্রেমে পড়েছিলাম এবং আমি প্রতিদিন শৃঙ্খলা শিখতে বক্সিংয়ে যেতাম। নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার একটি ভয় ছিল। আমাকে সম্পূর্ণ গোপনীয়তায় সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছিল। কারণ আমি ভীত ছিলাম৷ আমি ভাবতাম, আমার বাবা-মা হয়ত আমার বক্সিং করা মেনে নেবেন না৷ কারণ সোমালিয়ায় বক্সিংকে নারীদের খেলা হিসেবে দেখা হয় না৷’’

কিছু ঝামেলা পোহাতে হয়েছে রামলাকে৷ তবে তার মধ্যে অমিত সম্ভাবনা দেখে, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তার ভাই৷ ফলে আর বেগ পেতে হয়নি রামলাকে৷ তার ভাই তাকে জিমেও পৌঁছে দিতেন নিয়ম করে৷

রামলার প্রথম কোচ উইলিস ফিল্ডস বলেন, “আমি তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার দৃঢ় সংকল্প, তার ক্ষোভ এবং তার সফল হওয়ার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। আমি খুব দ্রুত বুঝতে পারি তার বিশেষ প্রতিভা আছে।”

রামলা তার ক্যরিয়ারের মধ্য দিয়ে নারী বক্সারদের জন্য ইতিহাস তৈরি করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তার কোচ উইলিস ফিল্ডস৷

আরো পড়ুন

তীব্র শীতে যুক্তরাজ্যে জনজীবন বিপর্যস্ত

লন্ডনে স্বস্তিকাযুক্ত ইসরায়েলের পতাকা টানিয়ে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার

উইন্ডসরে নিজেদের প্রাসাদের মালিকানা হারালেন হ্যারি-মেগান