তুরস্ক হতে ছুটি কাটিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার সময় এক ব্রিটিশ মুসলিম মহিলাকে আটক করেছে যুক্তরাজ্য পুলিশ। তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে ব্রিটিশ গণ্যমাধ্যমের খবরে জানা যায়। ব্রিটিশ মুসলিম মহিলার দাবি পুলিশ তাকে আটক করেছে সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়া ব্রিটিশ কন্যা শামিমা বেগমের সাথে নামের মিল থাকায়।
ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে ফিরে আসা শামিনা বেগম বলেছিলেন যে তাকে বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি “বোমা হামলাকে ঠিক মনে করেন কিনা”। তিনি জানান, তারা এটাও বলেন তাদের সন্দেহ হচ্ছে তার নাম নিয়ে। একই নামে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি রয়েছেন বলে তারা অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবন হোন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়, শামিনা বেগম তার সঙ্গীর সাথে তুরস্ক ভ্রমণ করেছিলেন।
শামিনা বেগম ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে অভিযোগ করেন, পাঁচজন অফিসার তাকে সন্ত্রাসবাদ আইন ২০০০ এর তফসিল ৭ এর অধীনে আটক করে। তিনি আরও দাবি করেন যে তার মোবাইল ফোন এবং হ্যান্ডব্যাগটি তারা দ্রুতগতিতে জব্দ করে। তার ডিএনএ এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টও নেওয়া হয়। তাকে তিন ঘন্টা ব্যাপী জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বেগম মনে করেন তাকে অগ্নিপরীক্ষায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। তার সাথে ব্যবহার ছিল “অবমাননাকর”। তিনি বলেন তিনি তার পিরিয়ড থাকাকালীন সময়ে একজন পুরুষ অফিসারের উপস্থিতিতে বিমানবন্দরে বাথরুমে যেতে বাধ্য হন যা ছিল অপমানজনক।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের বরাতে আরো জানা যায়, পরিশেষে কোন তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় বেগমের বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শামিনা বেগম সংবাদমাধ্যমকে জানান, আমি খুব অসহায়বোধ করেছি, বাড়ি যাওয়ার পথে সারা রাস্তায় কেঁদেছি। এখনও ঘুমাতে পারিনা। আমি সন্ত্রাসী নই এবং যেভাবে আচরণ করা হয়েছে আমি তার যোগ্যও নই।
বেগমের ঘটনা নিয়ে একজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, পুলিশ দ্বারা কাউকে আটক করা খুব সহজ। তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে তারা জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারে। কিন্তু এতে সেই ব্যক্তির উপর যে মানসিক আঘাত আসে তার খবর আর কেউ রাখে না। তিনি বলেন আমি শামিনা বেগমের সাথে কথা বলে জেনেছি স্বাভাবিক হতে তার দীর্ঘদিন লেগেছিল। এইসব মানসিক ট্রমা হতে মুক্তি পাওয়া কঠিন।
বেগম তার মানসিক অবস্থা নিয়ে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশকে অভিযোগ করেছিলেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে বরাতে জানা যায়। যদিও গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ এই মামলা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে। খবরে জানা যায়, বেগমের করা অভিযোগ পুলিশ কর্মীরা সমর্থন করেননি। তারা দাবি করেছিলেন যে এই স্টপটি ন্যায়সঙ্গত এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয়েছে।
শামিনা বেগম তাকে বিমানবন্দরে আটকানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি আপিল দায়ের করেছেন বলে জানা যায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “ যদি স্টপ এন্ড সার্চ করা হয় তবে তা কেনো সাদা লোকেদের উপর প্রয়োগ করা হয় না। কালো বা বাদামী চামড়া দেখলেই কেন স্টপ এন্ড সার্চ করতে হবে।
ভুল আইডেন্টিফিকেশনের কারণে তার উপর মানসিক অত্যাচার নিয়ে তিনি হতাশাগ্রস্ত বলেও জানান।
উল্লেখ্য যে শামিমা বেগম নামের ১৫ বছর বয়সী কিশোরী লন্ডন থেকে পালিয়ে তুরষ্ক হয়ে সিরিয়া চলে যান। পরবর্তীতে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাতিল করা হয়।
খবরে জানা যায়, শামিমা বেগম বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেতে যুক্তরাজ্য সরকারের সাথে আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।