TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় পেনশন বয়স ৬৭-তে তোলার পরিকল্পনা বাতিল হতে যাচ্ছে

যুক্তরাজ্য সরকার অবশেষে রাষ্ট্রীয় পেনশন বয়স ৬৬ বছরেই অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে পেনশন বয়স ৬৭ করার যে পরিকল্পনা আগে ঘোষণা করা হয়েছিল, তা আর কার্যকর হচ্ছে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশের লক্ষাধিক অবসরপ্রান্তে থাকা নাগরিক স্বস্তি পেয়েছেন।

 

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে ধাপে ধাপে পেনশন বয়স বাড়ানো হচ্ছিল। বর্তমান বয়স ৬৬, যা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমান। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে এটি ৬৭-তে উন্নীত করা। অনেক নাগরিক ইতিমধ্যেই তাদের অবসর পরিকল্পনায় ওই পরিবর্তন ধরে নিয়েছিলেন।

নতুন সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আয়ুষ্কাল সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান। দেখা গেছে, পূর্বাভাস অনুযায়ী যুক্তরাজ্যে গড় আয়ু বাড়েনি। ফলে পেনশন বয়স বাড়ানোর যৌক্তিকতা দুর্বল হয়ে গেছে। পাশাপাশি প্রবীণদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, শারীরিকভাবে কঠিন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত এক বছর কাজ করা ছিল অন্যায্য।

১৯৬০ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৬৮ সালের এপ্রিলের মধ্যে জন্ম নেওয়া নাগরিকদের জন্য এই সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তারা মনে করেছিলেন ৬৭ বছর বয়স না হলে পেনশন পাওয়া যাবে না। এখন বয়স অপরিবর্তিত থাকায় তারা আগে থেকেই অবসরে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন।

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটও এ সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছে। জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটে অনেক প্রবীণ কর্মী বিদ্যুৎ, গ্যাস, বাসাভাড়া মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সরকার মনে করছে, ৬৬ বছর বয়সেই পেনশন চালু রাখলে তাদের দ্রুত আর্থিক স্বস্তি দেওয়া সম্ভব হবে।

এই খবরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ট্রেড ইউনিয়ন, প্রবীণ অধিকার সংগঠন এবং সাধারণ নাগরিকরা একে বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বহু মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং নিজেদের নতুন অবসর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।

ডিপার্টমেন্ট ফর ওয়ার্ক অ্যান্ড পেনশনস (DWP) জানিয়েছে, পেনশন বয়স অপরিবর্তিত থাকায় আলাদা কোনো নতুন আইন প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই। যারা শিগগিরই অবসরে যাচ্ছেন তারা ৬৬ বছর বয়সেই পেনশন পাবেন। সরকারের অনলাইন পেনশন বয়স ক্যালকুলেটর এবং জাতীয় বীমা (NI) রেকর্ড যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেকে নিজেদের যোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারবেন।

তবে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। ৬৬ বছরেই পেনশন চালু রাখায় অতিরিক্ত কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হবে। এটি সামাল দিতে বাড়তি কর, ব্যয় সংকোচন বা ঋণের পথ ধরতে হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন। বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তের টেকসই থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

রাজনৈতিকভাবে এ সিদ্ধান্ত আগামী সাধারণ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রবীণ ভোটারদের কাছে এটি জনপ্রিয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে পেনশন ব্যবস্থা টেকসই রাখতে নিয়মিত পর্যালোচনার প্রয়োজন হবে। ২০৩০-এর দশকে আবারও বয়স বৃদ্ধির প্রস্তাব আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সূত্রঃ বিল্ড ওয়ার্ক

এম.কে
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরো পড়ুন

ইংল্যান্ডের লকডাউন উঠে যাওয়া এক মাস পেছাবে

অনলাইন ডেস্ক

অনলাইনে শুক্রাণু কিনে ইউটিউব দেখে জন্ম নিলো “ই-বেবি”

কেয়ার ওয়ার্কারদের পক্ষে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে পিটিশন দাখিল