কাব্রিয়া এবং লিংকনশায়ারের আশেপাশের এলাকায় নিউক্লিয়ার বর্জ্য ডিসপোজালের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার। যুক্তরাজ্য সরকার ২০৫০ সালের ভিতরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে যদিও তা নিয়ে কিছুটা বিরোধ আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় জনগণ।
বিজ্ঞানীরা জানান স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা ও সমর্থন ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব।উচ্চতর তেজস্ক্রিয় উপাদান আয়তনে প্রায় ৬৫০০ টি ডাবল-ডেকার বাসের সমতুল্য বর্তমানে যুক্তরাজ্যের আশেপাশে ২০ টি সাইটে মাটির উপরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু সময় যাওয়ার সাথে সাথে কিছু সাইলো তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে শুরু করেছে যা পরিবেশের জন্য মোটেও সুখকর নয়।
যুক্তরাজ্যের সরকারী সংস্থা নিউক্লিয়ার বর্জ্য পরিসেবা (এনডাব্লুএস) বলেছে, মাটির নীচে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য চাপা দেওয়াই প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং বিষক্রিয়া হতে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় ও স্থায়ী সমাধান।
সব বিষয় বিবেচনায় এনে আলারডেল, মিড-কোপল্যান্ড, কাব্রিয়ার দক্ষিণ কোপল্যান্ডের উপকূলীয় অঞ্চল এবং লিংকনশায়ারের থেডলথর্পে সমুদ্রের তীরের নীচে ভূতাত্ত্বিক নিষ্পত্তি সুবিধা (জিডিএফ) নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এনডাব্লুএসের প্রধান বিজ্ঞানী অধ্যাপক নেইল হায়াত বৃটিশ গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আমরা যদি যথাযথ প্ল্যানের কথা স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করি যেখানে নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে, এবং স্থানীয় বাসিন্দারা যদি আমাদের সাথে একমত হোন তাহলেই শুধু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব।”
এই সপ্তাহে চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট ছোট ছোট স্কেলে পারমাণবিক চুল্লিগুলির জন্য বাজেটের পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, অত্যাধুনিক পারমাণবিক শক্তির স্টেশন নির্মাণের জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে স্থানীয় জনগণের মতামত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তারা একমতে না পৌঁছালে ভিন্ন কোন পরিকল্পনাই সরকারের হাতে নেই।
অধ্যাপক হায়াত বলেন, “যদি আমরা পারমাণবিক
চুল্লির বর্জ্য নিয়ে পরিকল্পনা নিতে ব্যর্থ হই, সাধারণ জনগণ একমতে না পৌঁছান তাতে সরকার ঝামেলায় পড়বে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক বর্জ্য চাপা দেওয়ার এটাই সমাধান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইলোকে নিয়ে এই পরিকল্পনাতেই কাজ করে থাকে।
আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে এটি রেডিওলজিকাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নিরাপদ উপায়।”
যদি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হয় তাহলে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ট্রেনে করে টানেলের বর্জ্য নিষ্কাশনের স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। হেভি ডিউটি ক্যানিস্টারগুলি ভালোভাবে সীলমোহর করা হবে, জল আটকানোর জন্য কাদামাটি দিয়ে প্লাগ করা হবে এবং পুরো স্থানটি পূর্ণ হলে এমনভাবে সিল করা হবে যাতে আর কোনো বর্জ্য বের হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
কাব্রিয়ার সেলাফিল্ড পারমাণবিক সাইট থেকে মাত্র দুই মাইল দূরে একটি গ্রাম সিস্কেলে পাবলিক এনগেজমেন্ট ইভেন্টে স্থানীয়রা অত্যধিকভাবে সহায়ক ছিলেন জিডিএফ নির্মাণের ব্যাপারে।
কৃষক এবং স্থানীয় কনজারভেটিভ কাউন্সিলর ডেভিড মুর বলেন, “সেলাফিল্ড দুর্দান্ত অর্থনৈতিক সুবিধা বয়ে এনেছে আমাদের জন্য। তবে আমাদের কথা হল পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্কাশনের প্রক্রিয়া নিরাপদ উপায়ে পরিচালনা করতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি সাতটি নাতি -নাতনি পেয়েছি এবং আমি নিশ্চিত করতে চাই যে বর্জ্যটি নতুন প্রজন্মের জন্য ভবিষ্যতে কোনো ক্ষতির কারণ না হয়।”
তবে স্থানীয়দের মধ্যে ভিন্নমতও রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানের শিক্ষক কিথ হাডসন ভূতাত্ত্বিক নিষ্পত্তিটিকে সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান হিসাবে সমর্থন করেন। তবে তিনি ভূগর্ভস্থ পানি এবং কাব্রিয়ার জটিল ভূতত্ত্ব নিয়ে নিজের আশঙ্কার কথাও জানান। এমন কোন ব্যবস্থা ভেবেচিন্তে হাতে নেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিপর্যয়ের সম্মুখীন না হয়।
উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে ফিনল্যান্ড তার পারমাণবিক বর্জ্যের জন্য একটি ভূতাত্ত্বিক সমাধি তৈরি শেষ করেছে। ফ্রান্স, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং কানাডারও পরিকল্পনা চলছে।
যুক্তরাজ্য আশা করছে যে ২০৫০ এবং ২০৬০ এর মধ্যে পারমাণবিক বর্জ্যের জন্য একটি ভূতাত্ত্বিক সমাধি তৈরির কাজ শেষ করতে পারবে।