13.1 C
London
April 29, 2024
TV3 BANGLA
দক্ষিণ এশিয়া

হিন্দু হয়েও রমজানে রোজা রাখেন, দেখভাল করেন মসজিদ

ধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য খ্যাতি রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের। পূজা হোক আর ঈদ হোক, সব উৎসবে শামিল হন সব সম্প্রদায়। সেই সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই রাজ্যের বারাসাত জেলার একটি হিন্দু পরিবার।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, হিন্দু ভিটায় গড়ে উঠেছে মসজিদ। আর তা রক্ষণাবেক্ষণ করছে একটি হিন্দু পরিবার। শুধু তাই নয়, সে পরিবারের সদস্য পার্থসারথি বোস সিয়াম সাধনার মাসে নিয়ম করে রোজাও পালন করেন। গত ১৫ বছর ধরেই রমজানে রোজা রেখে আসছেন তিনি। পার্থসারথি বলেন, রোজার মাসে আমি যথেষ্ট উপকার পেয়েছি। তাই আমি নিয়ম করে রোজা রাখি।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালের আগে মসজিদের সঙ্গে আমার অত সম্পৃক্ততা ছিল না। বাবাই দেখাশোনা করতেন। কিন্তু সেবার রোজার মাসেই বন্ধুবান্ধবের সাথে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে উঠি। এরপর মদ্যপ অবস্থায় বাইক থেকে পড়ে ডান হাতটা ভেঙে যায়। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা বলে দেন, এ হাড় জোড়া লাগবে না। সারারাত ঘুমোতে পারিনি। মনের মধ্যে অনুশোচনা জাগে, আমি বুঝতে পারি রমজান মাসে আমি অন্যায় করে ফেলেছি। পরদিন সকালেই মসজিদে যাই।

পার্থসারথি বোস আরও বলেন, মসজিদে এসে স্রষ্টার কাছে বলি আমার ভুল হয়ে গেছে আর কোনোদিন হবে না। আমাকে তুমি শাস্তি দিয়েছ। আমি সেই ছেলে হব, যে রমজান মাসে রোজা রাখবে। আর কোনোদিন জীবিত থাকা অবস্থায় রোজা ভাঙব না। আমার এই হাত জোড়া লাগিয়ে দাও, এই বলে মসজিদের মাটি আমার হাতে লাগাই। এরপর আমার হাত ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। হাড়ও জোড়া লেগে যায়।

পার্থসারথি বলেন, এই মসজিদ আমাকে এমন শিক্ষা দিয়েছে যে, এই মাসটা আমাকে ভালো থাকতেই হবে। আর ভালো থাকার উপায় হলো রোজা। সারাদিন রোজা রেখে এই সময়টা মসজিদে পড়ে থাকি। এ সময় আমার মনে কোনো শয়তানি আসে না, বাজে চিন্তা পোষণ করতে পারি না। কারণ আমার মনে একটা ভয় ঢুকে গেছে। যদি আবার ভুল করি বা কিছু অন্যায় করি তাহলে আমার আবার ক্ষতি হবে। তারপর থেকেই রোজা রেখে আসছি।

বর্তমানে মসজিদের দায়িত্বে আছেন দীপক কুমার বোসের ছেলে পার্থসারথি বোস। তিনি জানান, এই মসজিদের দায়িত্বে এখন আমি আছি। সবার সহযোগিতায় মসজিদ নতুনভাবে গড়ে উঠছে। দুটো মিনার হয়েছে। ঈদের আগে খসে যাওয়া প্লাস্টারগুলো ঠিক করব। আমাদেরই অঞ্চলে হিন্দু মুসলমান মিলেমিশে থাকি।

বারাসাত ৮ নম্বর ওয়ার্ডে হিন্দুদের বসবাস। কোনো মুসলিম ভোটার নেই। ফলে পার্থসারথিদের আমানতি মসজিদে নামাজ পড়তে মুসল্লিরা আসেন দূরদূরান্ত থেকে। পার্থর অভিমত, বাবার দৌলতে ১৯৬০ সাল থেকে এই ওয়ার্ড যথেষ্ট শান্তিপ্রিয়। ওয়ার্ডে এই মসজিদের সাথে এখন সকলের সম্পৃক্ততা আছে। মায়ের পেটে যেমন শিশু থাকে, বলতে পারেন এই মসজিদ আমাদের সন্তান। সেভাবেই আগলে রেখেছি আমরা সকলে।

রোজার মাসে প্রতিদিন শতাধিক মুসল্লিকে ইফতার করায় বোস পরিবার। জুমায় ২০০ বেশি মানুষ নামাজ আদায় করেন। পার্থ জানান, আমার পরিবারে কেউ রোজা রাখেন না। কিন্তু সকলেই আমাকে সহযোগিতা করেন।

সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস

এম.কে
২৪ মার্চ ২০২৪

আরো পড়ুন

তীব্র গরমে পুড়ছে ভারত ও পাকিস্তান!

মোবাইল না দেয়ায় শিশুর আত্মহত্যা!

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নেওয়াজ, প্রেসিডেন্ট জারদারি